Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৯ বছরেও অব্যবহৃত ৭ কোটি টাকায় নির্মিত টার্মিনাল

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৭

ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী: ২০০৪ সালের জুন মাসে নির্মিত হয়েছিল নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল। ৭ দশমিক ৪১ একর জায়গার ওপর সাত কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনালটি এখনো অব্যবহৃত থেকে গেছে। এই টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছাড়ে না। তবে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসন ও উন্নত পরিবহন সেবা নিশ্চিতে আরডিএ নির্মাণ করে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। এখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ বাস পার্কিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। বাস চলাচল সহজ করতে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয় ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও বাস কাউন্টারগুলো নিয়ে যাওয়া যায়নি টার্মিনালে। ফলে নগরীর তালাইমারী, ভদ্রা, শিরোইল, রেলগেট ও গ্রেটার রোডসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসীরা।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর ব্যস্ততম সড়কের পাশেই ঢাকাগামী বাস কাউন্টার। সড়কের পাশেই যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু যাত্রী ওঠানামাই নয়, রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস ধোয়ামোছার কাজও করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল। তারপরও সড়কে যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কারণে দীর্ঘ ১৯ বছরেও রাজশাহীতে এমন অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ফলে যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।

বিজ্ঞাপন

ভোগান্তি দূর করতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে একটি যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন পক্ষের প্রধান ও প্রতিনিধিদের সম্মতিতে শিরোইল বাসস্ট্যান্ড থেকে সব বাস নওদাপাড়ায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে ১ নভেম্বর থেকে নওদাপাড়া আন্তজেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সব রুটের বাস চলাচলের কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক রাজশাহী রেলগেট থেকে ভদ্রা মোড়। রেলগেট থেকে শুভ পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি বাস। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাস্তার এক পাশেই কাউন্টার হওয়ায় রাস্তা দখল করে বাসে যাত্রী ওঠানামার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে মহানগর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থাকলেও তা ব্যবহার করছে না বাস মালিক সমিতি।

শনিবার (৮ জুলাই) নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা যায়, এখানে শুধু আন্তজেলা বাস রাখা হয়। তবে কোনো বাস এখান থেকে ছেড়ে যায় না। সব বাস ছাড়ে নগরীর ভদ্রা ও রেলগেট থেকে। আর দুরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যায় শিরোইল থেকে। বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে আছে। আর শুধু কিছু বাস দাঁড় করানো আছে। টার্মিনালের অভ্যন্তরে ভেঙেচুরে গর্ত হয়ে আছে। অনেকে গরু-ছাগলও পালছেন টার্মিনালের ভেতরে। মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনাল। টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলা এটি একটি ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হচ্ছে।

জানা গেছে, এর আগে কয়েকবার চেষ্টা করেও বাস টার্মিনাল শিরোইল থেকে সরাতে পারেননি। বাস মালিক ও শ্রমিকরাও নানা অজুহাতে শিরোইল বাস টার্মিনাল ছাড়ছে না।

নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে বাসের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করাচ্ছেন চালক রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নওদাপাড়া থেকে কোনো যাত্রী যেতে চায় না। তারা ভদ্রা অথবা রেলগেট থেকে বাসে উঠে। এখানে শুধু বাসের কাজ করানো ও রাখা হয়। আর এখান থেকে যাত্রী নিয়ে যাওয়ারও পরিবেশ নেই।’

পরিবহন মালিকরা বলছেন, নগরীর বাইরে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি থেকেই যায়। নিরাপত্তা ঠিকমত না থাকায় যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেই ভদ্রা ও রেলগেট মোড় থেকে যাত্রী ওঠানো হয়। এছাড়া নওদাপাড়ায় বাস টার্মিনালে যেতে যাত্রীদের অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ করতে হয়। নগরীর ভদ্রা কিংবা রেলগেট থেকে বাসে উঠলে সেই টাকা খরচ হওয়া থেকে রেহাই পায় যাত্রীরা।

একতা ট্রান্সপোর্টের উত্তরাঞ্চলের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘বাস টার্মিনালের পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে যায়। গাড়ির তলদেশ আটকে যায়। শুধু তাই নয়, আমরা যদি রাতে সেখানে যাত্রী নামিয়ে দেই তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। শহর থেকে দূরে হওয়ার সেখানে ছিনতাইকারীদেরও ভয় আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্মিনালে যেতে কোনো বাধা নেই। তবে আগে টার্মিনাল ঠিক হতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। রাজশাহী এমনি সুন্দর একটি নগরী। যদি যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে পারে তাহলে আমাদের যেতে অসুবিধে নেই।’

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শহরকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে চাইলে শহরের ভেতর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে বাইপাস দিয়ে চলাচল করাই ঠিক হবে। এতে শহর নিরাপদ ও সুন্দর থাকে। আর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালতো খুব দূরেও না। বাইপাস দিয়ে সড়কও হয়েছে চমৎকার। বিভিন্ন আন্তজেলা ও ঢাকার বাসগুলো শহরে ঢোকার কোনো মানেই হয় না। আরও চওড়া সড়কও নির্মাণ করা হয়েছ। ফলে শহরের বাইরে দিয়ে চলাচল করা সহজ ও সুন্দর হবে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সভাপতি মতিউল হক বলেন, ‘আমরা যেতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। ড্রেনটিও ছোট এবং করপোরেশনের ড্রেনের তুলনায় অনেকখানি নিচু। এখানকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশ শোচনীয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দুই মাসের সময় দিয়েছিলাম কিন্তু সেটির সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেননি তারা। সংস্কার কাজ শেষ হলেই আমরা নওদাপাড়ায় চলে যাব। দূরপাল্লা ও আন্তজেলা বাসগুলো নওদাপাড়া হয়ে পদ্মা আবাসিকের মধ্য দিয়ে ভদ্রা মোড় হয়ে চলাচল করবে।’

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (যুগ্ন সচিব) জিয়াউল হক বলেন, ‘নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটির মালিক আরডিএ। আগে টার্মিনালেটর ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সংস্কারের কাজের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল বলে শুনেছি। এরপর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমি আরডিএর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চেষ্টা চালাচ্ছি। টার্মিনালের বর্তমান কি অবস্থা এর খোঁজখবর নেব। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা করা হবে।’

সারাবাংলা/এমই/এনএস

নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর