দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
১২ জুলাই ২০২৩ ২৩:২০
ঢাকা: প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন পয়ঃশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃশোধন কেন্দ্র (এসটিপি) উদ্বোধন করা হবে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই)। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার’টি উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি পাগলা পয়ঃশোধনাগার’র পুনির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগারটি রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতনসহ বেশ কিছু এলাকার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বুধবার (১২ জুলাই) এক সংবাদ ব্রিফ্রিংয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৩ জুলাই ঢাকায় দশেরকান্দি স্যুয়েরেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। দেশে এটাই প্রথম এ ধরনের প্লান্ট।’
ঢাকার আফতাবনগরে তার অফিস সাইটে প্লান্ট সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে খান আরও বলেন, ‘প্লান্টে দৈনিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার ক্ষমতা আছে-যা রাজধানীর মোট পয়ঃশোধনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পাগলা, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর এলাকায় একটি করে আরও চারটি পয়ঃশোধন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।’
প্ল্যান্টটি ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্য-৬ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার আওতায় আনার পথপ্রদর্শক।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একক পয়ঃশোধানাগার প্লান্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম এবং এটিই সেরা। প্লান্টটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও জনবান্ধব।’
তিনি বলেন, ‘এই পয়ঃশোধনাগারের মধ্যেমে নর্দমা থেকে পরিশোধিত পানি বালু নদীর পানিতে পড়বে। যা নদীর পানির গুণগতমান বাড়ানোর পাশাপাশি পানি সুপেয় করে তুলবে।’
তাকসিম এ খান জানান, পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং রায়েরবাজারের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। ঢাকা ওয়াসার এই প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাই অ্যাশ, পয়ঃশোধনের উপজাত সিমেন্ট কারখানায় বিক্রি করা হবে। পরে তাদের সঙ্গে চুক্তি সই হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকা ওয়াসা তাদের কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ ডিজিটালাইজড করেছে। পদ্মা ও সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ অটোমেটেড করা হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে সরকারের যাত্রায় আমরা সঙ্গী।’
উল্লেখ্য, দাশেরকান্দি শোধানাগার প্ল্যান্ট- যা খিলগাঁও থানার অন্তর্গত, আফতাবনগরসংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেটন, মগবাজার, মালিবাহ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করবে।
চীনের অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২ দশমিক ২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এই অর্থের ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা জিওবি তহবিল থেকে, ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক প্রকল্পটির বাকি ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা হিসাবে দেবে।
প্রকল্পটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫৬০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাসহ একটি স্লাজ ড্রাইং-বার্নিং সিস্টেম রয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। পাওয়ার চায়নার অধীনে চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন দ্বারা ডিজাইন ও নির্মিত প্রকল্পটি এক বছরের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকার চারপাশে নদী দূষণ রোধে পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে ওয়াসার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগার প্ল্যান্টটি নির্মিত হয়েছিল।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম