বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচিতে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল মাসে এক শিশুসহ দুইজন মারা গেছেন।
এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন নারী, শিশুসহ অনেকেই। বর্ষার শুরু থেকে পাহাড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। আর এতেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে ধারণা চিকিৎসকের।
স্থানীয় লোকজন জানান, বর্ষায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। অনেক পরিবারেরই মশারি নেই। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে থানচি উপজেলা সদর, রেমাক্রী ও তিন্দু ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
শুধু তাই নয় গত কয়েকদিনে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অর্ধশতাধিক রোগী। জেলার রুমায় ও থানচিতে এক শিশুসহ দুইজন মারা গেছেন।
দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় আক্রান্ত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা মশারি ও ওষুধ বিতরণ করলেও সচেতনতার অভাবে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদের মধ্যে অনেকেই পায়ে হেঁটে ও নদী পথ পাড়ি দিয়ে সেবা নিতে আসছে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৩৩জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র জুন ও জুলাই মাসেই আক্রান্ত ১ হাজার ৬৯৩ জন। জেলায় বর্তমানে প্রায় শতাধিক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি মাসে ম্যালেরিয়ায় থানচিতে একজন ও রুমাতে একজন মারা গেছেন।
থানচির স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগী আবুল বশর জানান, হঠাৎ করে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার ধারণা কাজ করার সময় মশার কামড়েই তার এ রোগ হয়েছে। বর্তমানে সে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
বান্দরবানের দুর্গম থানচির রেমাক্রীর জুমচাষি ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মা মেচিং মারমা জানান, জুমে কাজ করতে গেলে মশা কামড়ায়, রাতের বেলায় বাসায় ঘুমালেও মশা কামড়ায়। দুই দিন ধরে আমার মেয়ের জ্বর, অচেতন হয়ে পড়ায় থানচি হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
আরেক রোগী চিংমে প্রু মারমা জানায়, আমরা যারা পাহাড়ে কাজ করি তারা রাতে মশারি না টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। যার কারণে মশার কামড়ে আমাদের ম্যালেরিয়া হচ্ছে। আমিও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
দুর্গম এলাকার ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সব ম্যালেরিয়া রোগীর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। যারা দুর্গম এলাকায় আছে তাদেরও সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মী পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগির ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের গর্ত ও ঝিরির পাশে জমে থাকা পানিতে মশার জন্ম হচ্ছে। দুর্গম এলাকার মানুষরা এ ব্যাপারে তেমন সচেতন না হওয়ায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন হাসপাতালগুলোতে ম্যালেরিয়ার রোগীই সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে থানচিতে রোগীর সংখ্যা সবেচেয়ে বেশি। রোগীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তার পাঠানো হচ্ছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান তিনি।