Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিতুকে খুন করতে মুসাকে বাধ্য করেছিলেন বাবুল আক্তার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৫ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ২০:২২

কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন পান্না আক্তার, যিনি বাবুলের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা’র স্ত্রী। সাক্ষ্যে পান্না জানিয়েছেন, মিতু হত্যার পর মুসা’র সঙ্গে বাবুল আক্তারের টেলিফোনে কথা হয়েছিল। পরে মুসা স্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি মিতুকে খুন করতে চাননি, তাকে খুন করতে বাধ্য করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন পান্না। এসময় মামলার আসামি বাবুল আক্তার আদালতে হাজির ছিলেন।

পান্না আক্তার সাক্ষ্যে জানান, ২০১৪ সাল থেকে তিনি নগরীর কালামিয়া বাজারে স্বামী-সন্তানসহ ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী মুসা বালির ব্যবসার পাশাপাশি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।

বিজ্ঞাপন

মিতু খুনের সংবাদ পাবার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ৪ জুন সন্ধ্যায় আমার বাসায় কিছু লোক আসে। আমি তাদের চা-নাস্তা দিই। কে বা কারা আমি জানি না, দেখিনি। ৫ জুন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা। আমার স্বামী মুসা নাস্তা পরোটা হালুয়া নিয়ে বাসায় আসে। আমরা নাস্তার টেবিলে দুই ছেলেকে নিয়ে নাস্তা করি। তখন বাসার টিভি অন ছিল আমাদের। তখন আমরা দেখতে পাই, টিভিতে এ ঘটনাটা।’

‘আমার স্বামীকে আমি জিজ্ঞাসা করি, মিতুকে কে বা কারা হত্যা করেছে? হেডলাইনে আসছিল- বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা। আমি তখন জিজ্ঞেস করি, উনি কি বাবুল আক্তারের স্ত্রী ? আপনি দেখতে যাবেন না ? উনি বলেন, আমি এখন যাব না। স্যার আসলে তখন যাব।’

পান্না আক্তার

এ পর্যায়ে বাবুলের আইনজীবী জানতে চান, বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে আসার পর (ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন) মুসা দেখতে গিয়েছিল কি না ?

জবাবে পান্না বলেন, ‘যে হারায় সে বুঝতে পারে হারানোর বেদনাটা কী ! আমি কিছুই মিথ্যা বলছি না। আমার বক্তব্য আগে শেষ হোক- এটা কেন জিজ্ঞেস করলেন। পরে গিয়েছিল কি না কিছু জানি না। উনি বাইরেই ছিলেন। দুইদিন পর আমার বাবা অসুস্থ হওয়ায় আমি রাঙ্গুনিয়ায় বাবার বাড়িতে যাই। সেখানে দু’য়েকদিন পর আমার স্বামীও আসেন।’

বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার’ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর ৭-৮ দিন পরে আমার স্বামী মুসার মোবাইলে টিএন্ডটি থেকে একটা কল আসে। কলটা আমি রিসিভ করি। আমাকে ওপাশ থেকে বলা হয়, মুসা কোথায় ? বলা হয়, মুসাকে সাবধানে থাকতে বলবা।’

‘২০১৬ সালের জুনের ১৯ তারিখ বা ২০ তারিখ, আমার স্বামী মুসাকে ওর (নিজের) ফোনে কথা বলতে শুনি। মুসাকে ফোনে বলতে শুনি- স্যার আমি তো এটা করতে চাইনি, আমার ফ্যামিলির কোনো সমস্যা হলে, আমি পুলিশের কাছে মুখ খুলতে বাধ্য হব। তখন আমি জিজ্ঞেস করি- এটা কে? আমাকে বলে, বাবুল আক্তার স্যার। আমি জিজ্ঞেস করি আপনি কি মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত আছেন ? উনি আমাকে উত্তর দেন- পান্না, আমি এটা করতে চাইনি, আমাকে বাধ্য করা হয়েছে।’

সাক্ষ্যে পান্না আক্তার আরও জানান, ২০১৬ সালের ২১ জুন রাঙ্গুনিয়া থেকে আমি চট্টগ্রামে আসি, মুসাসহ। মুসার পরিচিত নুরন্নবীর বাসায় আসি চট্টগ্রাম শহরে। কাঠগড় বন্দর এলাকায়। ২২ তারিখ ডিবি পরিচয় দিয়ে ওকে (মুসা) অ্যারেস্ট করে। সকাল ৭টা সাড়ে ৭টা হবে। তারপর আর আজ পর্যন্ত মুসার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’

সাক্ষ্যের শেষপর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পান্না বলেন, ‘মিতু একজন নারী। আমিও একজন নারী। আমাদের কিচ্ছু নেই। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। দুটো বাচ্চা, কিভাবে চলছি আমি জানি। সব মা চায় দিনশেষে নিজের সন্তানদের আদর করতে। আমার সন্তানদের জন্য আমি আছি। মিতুর সন্তানদের কেউ নেই। একজন নারী হিসেবে আমি মিতু হত্যার বিচার চাই’

‘পাশাপাশি আমার স্বামীকে আমি আইনের কাছে হাজির দেখতে চাই। আপনি অনুমতি দেন। যে অবস্থায় যেখানে থাকুক, আমার স্বামীকে হাজির করুক। সে যদি অপরাধ করে থাকে, ফাঁসি, সাজা, যা বিচার হয় আমরা হাসিমুখে মেনে নেব। আর যদি মেরে ফেলে, তার লাশটা আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হোক।’

সাক্ষ্যে পান্না আরও জানান, বাবুল আক্তারকে তিনি কখনো সরাসরি দেখেননি, তবে টিভিতে দেখেছেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পান্না আক্তারকে জেরা করেন আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পান্না আক্তারের পর সরোয়ার আলম নামে একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আংশিক জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আদালত মামলার কার্যক্রম মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করেছেন।

প্রসঙ্গত. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা বাবুলের স্ত্রী মিতুকে কিলিং মিশনের নেতৃত্বদাতা হিসেবে অভিযুক্ত। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল, পুলিশ তদন্ত করে যাকে মুসা হিসেবে শনাক্ত করেছিল। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত থাকার সময় ওই মুসা বাবুলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সোর্স ছিলেন। কিন্তু সেসময় ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন।

তবে ২০২১ সালের ১২ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুসাকে চেনার কথা স্বীকার করেন বলে পিবিআই জানিয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

আসামিদের মধ্যে শুধু মুসা পলাতক আছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ মিতু হত্যা সাবেক এসপি বাবুল আক্তার

বিজ্ঞাপন

আজ ঢাকার বাতাস সহনীয়
৫ জুলাই ২০২৫ ১০:৩৭

আরো

সম্পর্কিত খবর