চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ পেলেন ৫ জন
১৮ জুলাই ২০২৩ ০০:১৬
সাহিত্যচর্চা ও ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৫ জন পেলেন ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’। সোমবার ( ১৬ জুলাই) গুলশানে অনুষ্ঠিত ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’ কমিটি মনোনীত জুরি বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) এই ৫ জনের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। সোমবার ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’ কমিটির আহ্বায়ক কবীর আলমগীরের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
যারা চিন্তাসূত্র সাহিত্যপুরস্কার-২০২৩-এর জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন- প্রবন্ধে মহীবুল আজিজ, কবিতায় হেনরী স্বপন, কথাসাহিত্যে হাসান অরিন্দম, তরুণ কবি মালেক মুস্তাকিম ও ছোটকাগজ সম্পাদনায় পুনশ্চ সম্পাদক রবু শেঠ।
এ প্রসঙ্গে ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ কমিটির আহ্বায়ক কবীর আলমগীর বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় মাস ধরে জুরি বোর্ডের সদস্যরা চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করে ৫ শাখায় এই ৫ জনকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন। এই মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আমরা পুরস্কারের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদেরই নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছি।’
পুরস্কারপ্রাপ্তজনদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত
মহীবুল আজিজ
জন্ম: ১৯ এপ্রিল ১৯৬২, নড়াইল, যশোর। স্থায়ী নিবাস: চট্টগ্রাম। অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত প্রবন্ধ/গবেষণাগ্রন্থগুলো হলো: প্রবন্ধ ও গবেষণা: হাসান আজিজুল হক : রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার; কথাসাহিত্য ও অন্যান্য; বাংলাদেশের উপন্যাসে গ্রামীণ নিম্নবর্গ; সৃজনশীলতার সংকট ও অন্যান্য বিবেচনা; সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিত; ঔপনিবেশিক যুগের শিক্ষা-সাহিত্য; ইলিয়াস ও অন্যান্য নক্ষত্র; অস্তিত্বের সমস্যা ও লেখালেখি; সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও অন্যান্য প্রবন্ধ; উপনিবেশবিরোধিতার সাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধ; সরকারি ও মিশনারি শিক্ষা এবং বৌদ্ধধর্ম ও বাঙালি জীবন-চেতনা।
ছোটগল্প: গ্রাম উন্নয়ন কমপ্লেক্স ও নবিতুনের ভাগ্যচাঁদ; দুগ্ধগঞ্জ; মৎস্যপুরাণ; আয়নাপড়া; বুশম্যানের খোঁজে, নীলা মা হতে চেয়েছিল; মুক্তিযুদ্ধের গল্প; তপন শীল ও তার বিবাহ-প্রকল্প; এবং কর্নেলকে একটা মেয়ে পৌঁছে দিতে হবে।
কবিতাগ্রন্থ: সান্তিয়াগো’র মাছ; রৌদ্রছায়ার প্রবাস; হরপ্পা’র চাকা; পৃথিবীর সমস্ত সকাল; নিরানন্দপুর; বৈশ্য বিশ্বে এক শূদ্র; অসুস্থতা থেকে এই-মাত্র; এই নাও দিলাম সনদ; আমার যেরকম প্রস্তুতি; আমরা যারা স্যানাটরিয়মে; পালাবার কবিতা; দৃশ্য ছেড়ে যাই; ট্যারানটেলা; ওগো বরফের মেয়ে; হৃদয় বর্ণের কবিতাগুচ্ছ; ভরসানামা; কাব্যসমগ্র; শ্রেষ্ঠ কবিতা; হ্যাকার তুমি; প্রেমনামা এবং লকডাউন ও অন্যান্য কবিতা।
উপন্যাস: বাড়ব; যোদ্ধাজোড়; বর্ণসন্তান এবং প্রশান্ত পরিত্যাগ।
হেনরী স্বপন
জীবনানন্দের বরিশালে ১৯৬৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করে কবি হেনরী স্বপ্ন। তার উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থগুলো হলো: ’কীর্তনখোলা’, ‘মাটির বুকেও রৌদ্রজ্বলে’, ‘বাল্যকাল ও মোমের শরীরে আগুন’, ‘জংধরা ধুলি’, ‘ কাস্তে শানানো মোজার্ট’, ‘ঘটনার পোড়ামাংস ‘, ‘হননের আয়ু’ ), ‘উড়াইলা গোপন পরশে’। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করছেন বিখ্যাত ‘জীবনানন্দ’ কবিতাপত্র।
হাসান অরিন্দম
হাসান অরিন্দমের প্রকৃত (সরকারি কাগজপত্রে) নাম ড. মো. কামরুল হাসান। তার জন্ম এপ্রিল ২৭, ১৯৭২, ঝিনাইদহ শহর। তিনি ১৯৮৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৯০ সালে সরকারি কেসি কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ অনার্স, এম এ (১ম শ্রেণিতে ১ম)। বাংলার লোকজীবন ও আবু ইসহাকের কথাসাহিত্য বিষয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর আবুল আহসান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশা : অধ্যাপনা। সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সরকারি কেশব চন্দ্র কলেজ, ঝিনাইদহ।
সাহিত্যক্ষেত্রে ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিকরূপে পরিচিত। প্রকাশিত গ্রন্থ: একজন মানুষের সম্ভাবনা (প্রবন্ধ, ২০০২); সত্যিকারের রাজকন্যার গল্প (অনুবাদ, ২০০২); ক্রিকেট বিকেল ও একটি দোয়েল পাখি (কিশোর গল্প ২০০৬); বিদ্যাছায়াদ্যিা ও অন্যান্য গল্প (ছোটগল্প, ২০০৭); আবুল মনসুর আহমদের আয়না: বিষয় ও শিল্পরূপ (সম্পাদনা, ২০০৮); কালোসাপের অথবা সাপের কালো কিংবা নীল (ওরফে ব্লু) গল্প (ছোটগল্প ২০১০); বচন-অরিন্দম (সূক্ত বচন শতক, ২০১৩); দুরবিনে দেখা কতিপয় দৃশ্য (ছোটগল্প, ২০১৪); আমাদের দৃষ্টিসীমায় কোনো বাতিঘর ছিলো না (ছোটগল্প, ২০১৬); বাংলাদেশের সাহিত্য ও প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ (প্রবন্ধ, ২০১৭); প্রেম ও পটভূমি ছোটগল্প (ছোটগল্প, ২০১৮); বিজ্ঞানী মুসা ও কল্প-পৃথিবীর স্বপ্ন (কিশোর গল্প, ২০১৮); বাংলার লোকজীবন ও আবু ইসহাকের কথাসাহিত্য (প্রবন্ধ, ২০১৯); গোরখোদক ও অন্য জ্যোৎস্না ( ছোটগল্প, ২০২০); গলে পড়ছে সময়ের মোম (ছোটগল্প, ২০২১); অর্ধচেতনার ডালপালা (ছোটগল্প, ২০২২); পরাক্রান্ত প্রহর (ছোটগল্প, ২০২৩); ছোটগল্প : পাঠ ও পর্যবেক্ষণ (প্রবন্ধ, কলকাতা পুস্তকমেলা ২০২৩) এবং শ্রেষ্ঠগল্প (কলকাতা পুস্তকমেলা ২০২৩)
রবু শেঠ
জন্ম: ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। শৈশব পেরিয়ে কিশোর বয়সে নওগাঁয় পদার্পণ। নওগাঁর স্কুল, কলেজেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ। পেশায়, গ্রাফিক ডিজাইনার। আত্মকর্মসংস্থান ‘পুনশ্চ’ প্রকাশনা। রবু শেঠ মূলত কবি। এই পর্যন্ত তার প্রকাশিত কবিতার বই ৩টি। এগুলো হলো: নিসর্গের ঢোল (২০০৮), ঈশ্বরের ক্যামেরা (২০১৪) ও তেজপাতার অরণ্যে (২০১৬)।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে রবু শেঠ শুরু করেন ছোটকাগজ ‘পুনশ্চ’ সম্পাদনা। তিনি গত ২২ বছর ধরে‘পুনশ্চ’ সম্পাদনা করে আসছেন।
ছোটকাগজ ‘পুনশ্চ’ সম্পাদনার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে পেয়েছেন ‘বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার’ এবং ২০১৬ সালে পেয়েছেন ‘হারাগাছ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ’ পুরস্কার।
মালেক মুস্তাকিম
মালেক মুস্তাকিমের জন্ম ১৯৮৫ সালের ১ মে, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামে। তার পিতার নাম ইসহাক উদ্দিন, মাতা কোহিনুর বেগম। পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান। মালেক মুস্তাকিমের পড়ালেখার হাতেখড়ি গান্ধাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গান্ধাইল রতনকান্দি ইউনিয়ন আলী আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন ঢাকা কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
মালেক মুস্তাকিম এ সময়ের একজন তরুণ কবি। নিজেকে ভেঙ্গেচুরে প্রতিনিয়ত নতুন করে নির্মাণ করে চলেছেন। কবিতায় তিনি তৈরি করেছেন নিজস্ব স্বর, ভাষা ও ভঙ্গি। এজন্য খুব সহজেই তার কবিতাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে চেনা যায়। শব্দ, বাক্য আর ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। পেশা সরকারি চাকরি, নেশা তার লেখালেখি। সাহিত্য সাময়িকী ও ছোট কাগজে নিয়মিত লিখছেন। প্রকাশিত কবিতার বই: ভুলের ভূগোল; বিষণ্নতাবিরোধী চুম্বনগুলি; তোমার সাথে হাঁটে আমার ছায়া; ঘুণপোকা মন; একান্ত পাপগুচ্ছ; এবং আমি হাঁটতে গেলে পথ জড়িয়ে যায় পায়ে।
উল্লেখ্য, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে বেগবান করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয় চিন্তাসূত্র ওয়েবম্যাগ। এই ওয়েবম্যাগে বিশুদ্ধ সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নতুন লেখকের পরিচর্যা, নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে প্রবর্তন করা হয় ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার’। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ।
২০২১ সালে তিন শাখায় তিন জনকে চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তজনরা হলেন প্রবন্ধে অনীক মাহমুদ, কবিতায় মাহমুদ কামাল ও কথাসাহিত্যে রুমা মোদক। ২০২২ সালে ছয় শাখায় ছয় জনকে চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তজনরা হলেন প্রবন্ধে গাউসুর রহমান, কবিতায় সেলিনা শেলী, কথাসাহিত্যে সাদিয়া সুলতানা, শিশুসাহিত্যে তৌহিদ এলাহী, তরুণ কবি শাখায় শাহিন সপ্তম ও সংগঠনে জয়দুল হোসেন।
সারাবাংলা/পিটিএম