Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের গ্রেফতার না করার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২৩ ১২:৪১

ঢাকা: সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দুই চিকিৎসক গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চিকিৎসকদের সব সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব অল সোসাইটি। একইসঙ্গে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠলেই তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়া চিকিৎসকদের গ্রেফতার না করার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

একই সঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় গ্রেফতার দুই চিকিৎসককে অনতিবিলম্বে জামিন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশন অব অল সোসাইটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্য দেন সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটি অব সার্জনসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। উপস্থিত ছিলেন সোসাইটি অব মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিঞা, ওজিএসবি’র (অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান, ওজিএসবি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ সহ অন্যান্যরা।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, চিকিৎসায় অবহেলা আমরা কোনেভাবে সমর্থন করি না। অবহেলা প্রমাণিত করার জন্য যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার বিপক্ষে আমরা নই। কিন্দু যেকোনো সভ্য দেশে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কারণে রোগীর মৃত্যু হলে তার জন্য মিডিয়া ট্রায়াল হয় না। সেখানে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে চিকিৎসক, রোগীর নিকট আত্মীয় ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সেখানে শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত ব্যতিরেকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় না।

তিনি বলেন, তদন্ত ছাড়া চিকিৎসককে পুলিশ কতৃর্ক হয়রানি বা গ্রেফতার হলে মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকরা সাহস হারিয়ে ফেলবেন। এতে করে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশের চিকিৎসক, চিকিৎসাব্যবস্থা ও সর্বোপরি রোগীদের স্বার্থে বিনা তদন্তে চিকিৎসক গ্রেফতারের মতো বেআইনি কাজ না করার জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে যথাযথভাবে বিবেচনা করতে চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বর্ণিত অবস্থায় জনসচেতনতা তৈরি এবং প্রচলিত আইন (পেনাল কোড ধারা-৮৮,৮৯,৩০৪,৩০৪ক) না মেনে শুধুমাত্র আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চিকিৎসকদের গ্রেফতারের মত অত্যন্ত গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সব সোসাইটি শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রুটিন রোগী দেখা এবং রুটিন অপারেশন করা থেকে দুই দিন বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডা. আহমেদুল কবির আরও বলেন, দেশের বিদ্যমান আইনে দণ্ডবিধির ধারা ৮৮ তথা ভালো উদ্দেশ্যে বা রোগ উপশমের জন্য সম্মতিসহ কোনো রোগীর চিকিৎসা (অস্ত্রোপচার) করার সময় বা পরে যদি রোগীর মৃত্যু ঘটে, সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

তিনি জানান, সেন্ট্রালের ঘটনায় গ্রেফতার দুই চিকিৎসকের জামিনের ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে সব মহলে যোগাযোগ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

চিকিৎসকদের কোনো ভুল ছিল কিনা খতিয়ে দেখতে ওজিএসবি (বাংলাদেশ অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) কোনো তদন্ত করেছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির নেতা অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান বলেন, সেন্ট্রালের ঘটনায় ওজিএসবি একটি রিপোর্ট করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি পর্যালোচনা করে জানানো হবে।

অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, আমরা চাই স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত হোক। এর জন্য দরকার নিরাপদ কর্মস্থল। যারা ভুল চিকিৎসা করছে, আমরা তাদের পক্ষে না। কিন্তু নির্দোষ কেউ যেন শাস্তি না পায়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই স্বাস্থ্য অধিদফতর সরেজমিনে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে। আইসিইউ ও অস্ত্রোপচার ম্যানেজমেন্টে সংকট থাকায় সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্ত শুরু হয়। যা এখনও চলছে।

যেখানে লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা নেয় সেখানে একেবারে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার মত কঠোর আন্দোলনে যাওয়া কতটা যৌক্তিক-এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. টিটু মিঞা বলেন, আমরা একবারে কঠোর অবস্থায় যাইনি। শুরুতে কালো ব্যাচ ধারণ, মানববন্ধন করেছি। এরপর আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আমরা সরকারি হাসপাতালে এমন কর্মসূচি দেইনি। বেসরকারিতে জরুরি ও অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত চেম্বারে বসছি না। আমরা কাউকে জিম্মি করিনি। আমরা বলতে চাই চিকিৎসকদের গ্রেফতারের বিষয়টি অবৈধ। আমরা নিরাপদ কর্মস্থল চাই, চিকিৎসকেরা মর্যাদা পাক এটাই চাই।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন রাজধানীর গ্রীন রোডের বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন কুমিল্লার প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের আশায় আসলেও জটিলতা বাড়ায় অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসব করেন তিনি। পরদিনই মারা যায় নবজাতক। আর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থেকে কয়েকদিন পর ১৮ জুন মারা যান মা আঁখিও।

এ ঘটনায় হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসকসহ ডা. সংযুক্তা সাহার ব্যক্তিগত সহকারি জমিরের নাম উল্লেখ করে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। পরে ওই হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আরও একজন চিকিৎসককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত।

গ্রেফতার দুই চিকিৎসক নিজেদের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে যে চিকিৎসকের প্ররোচনায় ঝুঁকি নিয়ে কুমিল্লা থেকে এসেছিলেন আঁখি।

এ ঘটনায় চিকিৎসকদের জামিন ও চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে কর্মবিরতি ডাক দেন চিকিৎসকেরা।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর