Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমপি নদভীর বিরুদ্ধে ৬ ইউপি সদস্যের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৬

চটগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চরতি ইউনিয়ন পরিষদের ছয় সদস্য।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় নগরীর ওয়েল পার্ক রেসিডিয়ান্স হোটেলের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমপি ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়।

এর আগে গত ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলী চাঁন মিয়া বাড়ি এলাকায় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের বসতঘরে সন্ত্রাসী হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিনের নির্দেশে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য নুরুল আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২০ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যেমে স্থানীয় এমপি আবু রেজা নদভীর শ্যালক ও চরতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী বালু চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের আমরা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ৮ জন সদস্য হলফ করে বলতে পারি প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের বিষয়ে এজেন্ডা ছিল না এবং আমরা কোন রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিনি।’

‘কিন্তু হঠাৎ করে বর্তমান চেয়ারম্যান বহিষ্কার হওয়ার পরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন নিজেকে ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর সুপারিশে দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তাকে মামলা দিয়ে জেল হাজতে ঢুকিয়ে দিবেন। প্রয়োজনে প্রাণনাশের হুমকিও দেন তিনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এমপি নদভীর ভাতিজা আ ন ম সেলিমও ইউপি সদস্যদের নুরুল আমিনের বিষয়ে কেউ যেন কোনো কথা বা প্রতিবাদ না করে নানা প্রকার চাপ ও ভয় দেখান। এই বিষয়ে আমরা যৌথ স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ জানাই। এতে নুরুল আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা নদভীর নির্দেশে এবং তাহার ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা প্রকার হয়রানি এবং প্রকাশ্যে হুমকি দেন।’

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩ টার দিকে বাড়ির প্রধান ফটকে আঘাতের শব্দে আমি ও পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফটকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে হামলাকারীরা পুলিশ পরিচয় দেয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি বিষয়টি সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমানকে মোবাইলে জানালে তিনি পুলিশ নয় বলে আমাকে নিশ্চিত করেন।’

‘১৫-২০ জনের সন্ত্রাসীরা ফটক খুলতে ব্যর্থ হয়ে ঘরের দরজা-জানালা, লাইট ভাংচুর ও মিটারের তার ছিঁড়ে ফেলে। ঘটনার সময় যাতে প্রতিবেশিরা বের হতে না পারে সেজন্য সবার ঘরের দরজা বাহির থেকে হামলাকারীরা আটকিয়ে দেয়। এ সময় আমি ফেসবুক লাইভ এসে এলাকাবাসীসহ প্রশাসনকে হামলার বিষয়টি অবগত করি।’

সংবাদ সম্মেলনে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘরে আজ কেউ নিরাপদে নেই। আমরা নিরাপত্তা চাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। এই পার্টির জন্য আমরা শ্রম দিয়েছি। অথচ আমরা প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। তবুও আমরা এরকম পরিস্থিতির শিকার। এর থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দেখুন, হাইব্রিড এমপির নির্যাতনে কীভাবে আমরা জীবনযাপন করছি। আপনার ডাকে আমরা সারাজীবন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপনার কর্মীকে আজ জামায়াত থেকে আসা এমপি ও তার পেটোয়া বাহিনী নির্যাতন করে এলাকাছাড়া করার পরিকল্পনা করছে। আমরা আপনার কাছ থেকে সুবিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নুরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চরতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বহিষ্কার হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে সবার সম্মতিক্রমে ভোট হয়েছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করছে তাদের স্বাক্ষর আছে। বিধি মোতাবেক সব হয়েছে। পরে তা টিএনও অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। টিএনও যদি বলে নির্বাচন আবার করতে আবার হবে।’

বাড়িতে হামলার বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আপনি এখানে এসে ১০০ লোককে জিজ্ঞেস করে জরিপ করুন। তাহলে আপনি জানতে পারবেন তাহলে আমি এই হামলার সাথে জড়িত কিনা।’

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সাইফুল সম্পর্কে আমার নাতি হয়। প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য কেন আমি সাইফুলকে স্বাক্ষর দিয়েছি, এজন্য আমাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এমপি নদভী আমাকে সরাসরি কল দিয়ে বলেছে কেনো আমি তাকে স্বাক্ষর দিয়েছি।’

‘আমার ছেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে। পরের দিন সেলিম আমাকে কল দিয়ে আমার ছেলের চাকরি চলে যাবে বলে হুমকি দেয়। তার পরেই আমার ছেলের চাকরি চলে যায়। তারা আমাকে বলেন, যাকে সিগনিচার দিয়েছি সেই সাইফুলকে, মোতালেবকে ও ডান্ডিকে (বিপ্লব) চাকরি দিতে বল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

সংবাদ সম্মেলনে চরতি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো.হানিফ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক শিকদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

এমপি নদভী সংবাদ সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর