বাড়ছে ডেঙ্গু, পরিবার নিয়ে অবকাশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র
২০ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩৮
ঢাকা: সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে বলছেন, পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মতো সময়। এমন অবস্থায় জরুরি কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির মতো আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা। কিন্তু জানা গেল, সপরিবারে অবকাশ যাপনে মালয়েশিয়ায় আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শুধু তাই না, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচাইতে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন এলাকায়। এমন অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১৪ জুলাই থেকে ১৭ দিনের জন্য সপরিবারে যান বিদেশ সফরে।
ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতি তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও অবকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবকাশে ১২ জুলাই থেকে
দেশে ১২ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৭ জন। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৪ জন।
এ গেল ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা। এরই সঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৭ ও ১৮ জুলাই প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধের ঘোষণা দেয় অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। বাড়ে রোগীদের ভোগান্তি।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর আন্দোলন নিয়েও চিকিৎসকদের মাঝে বাড়তে থাকে অসন্তোষ। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যেখানে পুলিশের লাঠি হামলার শিকার হয় বলেও অভিযোগ চিকিৎসকদের।
এমন অবস্থায় দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূমিকা দেখতে চেয়েছিলেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব রিয়াজুল হক জানান, স্যার বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফ্যামিলি ট্রিপে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মালয়েশিয়া আছেন। গত ১২ জুলাই এক সপ্তাহের ট্যুরে গেছেন।
জানতে চাইলে বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক বলেন, ‘যখন পুরো দেশজুড়ে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে স্বাস্থ্যের বেসামাল অবস্থা, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে পারেন না। কারণ সবাই তার দিকনির্দেশনায় কাজ করবে এমন সময়। এমন অবস্থায় তিনি দেশের বাইরে কিভাবে থাকেন তা আমি বুঝতে পারছি না।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে ফিরে আসবেন বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাত ২টার দিকে।
দেশের বাইরে অবকাশে ডিএসসিসি মেয়রও
দেশে বর্তমানে সবচাইতে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মতো পর্যায়ে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ জুলাই ১৭ দিনের বিদেশ সফরে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ডেনমার্ক ও সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করবেন। এই ভ্রমণের বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া এবং যাবতীয় ব্যয়ভার মেয়র ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে ভ্রমণের ব্যয় বহন করা হবে না।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে আগেই মেয়রের ছুটি নেওয়া ছিল। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে খুব একটা প্রভাব পড়বে না । কারণ মেয়র তো আর মশা মারবেন না। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেভাবেই কাজ চলবে।’
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, মেয়র তাপসের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেয়র প্যানেলের সদস্য ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদ উল্লাহ মিনু।
শহিদ উল্লাহ মিনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে তিনি তো খুব একটা ছুটিতে যান না। বিদেশ গেলেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সেখান থেকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন, নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কন্ট্রোল রুম খুলে দিয়ে গেছেন। সেখানে বসে আমি মেয়রের নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে এই অফিসে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও বসেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আমরা সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এদিকে মেয়রের বিদেশযাত্রা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন রাজধানীর পূর্ব জুরাইন এলাকার নাগরিকরা।
পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পূর্ব জুরাইনের প্রতিটি ঘরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। রক্ত দিতে দিতে এলাকার তরুণেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ এলাকায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া জরুরি। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মেয়র ইউরোপে ঘুরতে গেছেন।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় কমিটি
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ড. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু এবার যেভাবে ছড়িয়েছে তা আতঙ্কজনক। কারণ সারাদেশেই ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত কমিটি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়ছে। ঠিক তেমনভাবে যেমনটা আমাদের দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সময় করা হয়েছিল। নইলে পরিস্থিতি আসলে কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা কষ্টকর। যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি কিন্তু ভয়ঙ্করই হয়ে উঠছে দিনের পর দিন।’
ড. মোশতাক বলেন, ‘কমিউনিটিকে জানানো বা সম্পৃক্ত না করলে এই কাজ কেবল সিটি করপোরেশন কর্মীদের দ্বারা কোনোভাবে সম্ভব হবে না। সুতরাং এখানে সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি হাজার শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবককে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে