Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শক্তির মহড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, ছাড় দেবে না পুলিশও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২৩ ২৩:০৩

ঢাকা: সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানী ঢাকা ছিল রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মুখর। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মহাসমাবেশ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ- সবমিলিয়েই ছিল দিনভর ব্যস্ততা। প্রায় শূন্য অবস্থায় ছিল রাজধানীর বুকে গণপরিবহন চলাচল, মোড়ে মোড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক প্রহরা।

এদিন রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যকার সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি ছাড়া আর কোনো অস্বস্তির খবর আসেনি। অনেকটা শান্তিপূর্ণ মহড়ার মাধ্যমে শুক্রবারের কর্মসূচি শেষ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে শনিবারের কর্মসূচি ঘিরে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে সকাল ১১টা থেকে অবস্থান নেবে দলটি, একই কর্মসূচি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চও। তবে কম যাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরাও। বিএনপির দুই ঘণ্টা আগেই তারাও ঢাকার প্রবেশমুখগুলো দখল করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে পুলিশও বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে ঢাকার প্রবেশমুখ দখলে রাখতে দেওয়া হবে না। কোনোপ্রকার অরাজক পরিস্থিতি বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ গুলোতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল ছুটির দিন। আশুরা আছে। সেটি আগেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করব। এ ব্যাপারে প্রশাসন এবং সরকার সবরকম সহযোগিতা করবে বলে আমরা আশা করি।’

কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও কষ্ট করতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের দেওয়া তথ্যমতে, সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উল্টো দিকে রাস্তার পূর্ব পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি অবস্থান করবে। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

একই সময় গাবতলী এস এ খালেক বাস স্টেশনের সামনেও অবস্থান করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আরেকটি অংশ।

এছাড়া সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়া বাজার বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থান করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

একই সময় যাত্রা বাড়ি হানিফ ফ্লাই ওভার থেকে নেমে চট্টগ্রাম রোডের দনিয়া কলেজের সামনে অবস্থান করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একটি অংশ। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিএনপির এই কর্মসূচির বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। চোখ রাঙাবেন না। রাস্তা বন্ধ করতে এলে আপনাদেরও (বিএনপি) চলার পথ বন্ধ করে দেব।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন দলটির ৩ সংগঠনের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে এই শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে সমাবেশ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে যোগদান করে। দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। দুপুরে এক দফা বৃষ্টির পর আবারও বৃষ্টি শুরু হলেও নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান করে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা দল সেই দলের নেতা তারেক রহমান, ফখরুল, আমির খসরুরা আইন মানে না। এরা সুপ্রিম কোর্টে মানে না, হাইকোর্ট মানে না। এত অহংকার, এতো দম্ভ ভালো নয়। টাকার বাহাদুরি থাকবে না। কারা কারা ঘন ঘন লন্ডনে যাচ্ছেন তারেক রহমানের হাতে ডলার তুলে দিচ্ছেন? আমরা জানি। কারা যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে এমপি হবেন। নমিনেশন বাণিজ্য করবেন; সেই জন্য এখনি তাকে হাত করছেন, টাকা দিচ্ছেন। সে নিজে কোনোদিন দেশে আসতে পারবে?’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্ত্র প্রহরীর মতো অবস্থান করবে।’

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীরলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম।

আয়োজক সংগঠনের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ যৌথভাবে পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।

অবস্থান কর্মসূচি ও শান্তি সমাবেশ নিয়ে শনিবারও মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপি যেন বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে- সেজন্য নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো- আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাবতলী, আমিনবাজার, বাবু বাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শ্যামপুর, কমলাপুরে সকাল থেকে অবস্থান নেবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি প্রতিহত করতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকার প্রবেশমুখ- ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, বাবু বাজার, শ্যামপুর, কমলাপুর অবস্থান নেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ গাবতলী এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবে বলে জানান দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পী।

এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের হত্যা, গুম, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকির প্রতিবাদে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের প্রবেশপথে শান্তি সমাবেশ করবে যুবলীগ। সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাবতলী, আমিনবাজার, বাবু বাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী সহ রাজধানীর সব প্রবেশমুখে শান্তি সমাবেশ করবে যুবলীগ।

গাজীপুর জেলা ও গাজীপুর মহানগর যুবলীগ অবস্থান নেবে টঙ্গী ব্রিজ এলাকায়, ধামরাই, সাভার ও আশুলিয়া উপজেলা যুবলীগ আমিনবাজার সমাবেশ করবে। দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ বাবুবাজার এলাকায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগ সাইনবোর্ড এলাকায়, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগ কাঁচপুর ব্রিজ প্রাঙ্গণে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ শনির আখড়া ও ধোলাইরপাড়ে, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ আব্দুল্লাহপুর ও গাবতলীতে শান্তি সমাবেশ করবে।

ঢাকার প্রবেশমুখে শনিবার বিএনপি এবং যুবলীগ পালটাপালটি অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উত্তেজনা বিরাজ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে পুলিশ কাউকে রাস্তা বন্ধ করতে দেবে না।

জনদুর্ভোগ হবে এমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকেই ঢাকার প্রবেশপথে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিইনি। তাই রাস্তাঘাট অবরোধ করতে দেব না। রাস্তাঘাট সচল রাখব।’

সারাবাংলা/একে

আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর