তারেক-জোবাইদার সর্বোচ্চ ১৩ বছর সাজা চায় দুদক
১ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৫
ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। তবে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিতে শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। এ কারণে এই মামলায় তারা আইনি লড়াই করতে পারছেন না।
এদিকে রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পৃথক দুই ধারায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা ১৩ বছরের কারাদণ্ড হবে বলে সংস্থাটির আশা।
তারেক রহমানের পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মামলাটির অভিযোগ মিথ্যা, তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকার তড়িঘড়ি করে মামলার রায় দিচ্ছে।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ উপার্জন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য জানতে পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তারেক রহমানকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেন। তিনি জেলখানায় থাকা অবস্থায় নোটিশ গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য দুদকের কাছে সময় চান। সুতরাং তারা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। তারা যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন দুদক তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছিল। এফআইআর করার সময় চার কোটি ৭৩ লাখ টাকার মতো তথ্য গোপন ও বিভিন্ন অভিযোগ ওই মুহূর্তে আমরা পেয়েছিলাম। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়।
তিনি জানান, পরবর্তীতে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের দুদক এবং তার তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হওয়ার পরেও দুদক নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৮টা সিজার লিস্টের ভিত্তিতে এফআইআর এ যে চার কোটি ৮১ লাখ টাকার অভিযোগ ছিল সেখান থেকে সরে এসে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকা তার অবৈধ উপার্জন এবং ৫৮ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘দুদক অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে সঠিকভাবে তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে হাজির হওয়ার জন্য আমরা বারবার নোটিশ দিয়েছি। গ্রেফতারি পরোয়ানা,পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তারপক্ষে আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তারা তাকে ডিফেন্ড করার জন্য চেষ্টা করেছেন। ইভেন তারা প্রাইভেট আইনজীবী চেয়েও এখানে ডিফেন্ড করার জন্য তার পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়েছে। তিনি যেহেতু পলাতক এজন্য সুযোগ পাননি। তিনি দেশ ও জাতির প্রতি যে আইন তার প্রতি তিনি বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়েছেন। তিনিও উপস্থিত হননি, এমনকি তার স্ত্রীও উপস্থিত হননি। সেই কারণে মাননীয় আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করতে বাধ্য হয়েছেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। তথ্য গোপনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর। আমরা আশা করছি, দুদক আইনের ২৬ (২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭ (১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
এদিকে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনজীবী আইনী লড়াই করতে পারেননি। তবে প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হন তাদের নিয়োজিত আগের আইনজীবী। প্রতিটি ধার্য তারিখে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ঝাটিকা মিছিলও করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
তাদেরই মধ্যে একজন জাকির হোসেন ভূঁইয়া জানান, তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যান। তার সঙ্গে বিদেশে পাড়ি জমান স্ত্রী জোবাইদা রহমানও। তাদের মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে। এ কারণে আমরা তাদের পক্ষে ডিফেন্ড করার সুযোগ ছিল না। মামলাটির অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পকাহিনিমূলক, এক টাকাও কেউ তছরূপ করেনি। এখানে কোনো রকমের দুর্নীতি হয়নি। তারেক রহমানের স্ত্রী হওয়ার কারণে জোবাইদা রহমানকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। মামলায় জোবাইদা রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখানে এক টাকাও অবৈধ নেই।
জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা কারণে রাজনৈতিকভাবে তড়িঘড়ি করে মামলার রায় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এই আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে মনে করি না।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবাইদা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। পরবর্তীতে আবারও মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে উচ্চ আদালত ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। গত ২৪ জুলাই মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
সারাবাংলা/এআই/একে