বিএনপিকে ভোটের মাঠে ধরেই কৌশল সাজাচ্ছে আ.লীগ
১ আগস্ট ২০২৩ ২২:১৬
ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে উন্নয়ন-অর্জন-অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি রাজপথে সাংগঠনিক শক্তির লড়াইয়ে জোরালো ভূমিকার মহড়া দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দ্বাদশের ভোটের মাঠে বিএনপিকে প্রধান প্রতিপক্ষ ধরেই রাজপথের সম্ভাব্য সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচনি কৌশল সাজাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্র বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন শরিক জোট নির্বাচনে অংশ নিলে নিজ দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কৌশলও নিয়ে রাখছে দলটি।
অপরদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচনকালীন আন্দোলন মোকাবিলা থেকে শুরু মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কৌশলও নিয়ে রাখবে দলটি। এ লক্ষ্যে টানা চতুর্থবার নৌকার জয়ের লক্ষ্যে আগামী ৬ আগস্ট গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলকে দ্বাদশের নির্বাচনমুখী বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ও এর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই সাংগঠনিক ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে জবাব দিতে দলের সব পর্যায়কে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ-দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো মীমাংসার উদ্যোগ নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
কোথাও স্থানীয় নেতারা একক আধিপত্য ধরে রাখতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করছেন কি না, প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধে জড়াচ্ছেন কি না, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে কি না- এ সব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দলের নেতারা সমস্যা সমাধানে কাজও শুরু করবেন। আগামী ৬ আগস্ট গণভবনের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ বিষয়ে বিশেষ গাইডলাইন দেবেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আমাদের দল টানা মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। আমরা মনে করি, এতে তৃণমূলের কোথাও কোথাও কোনো নেতা বা এমপির একক আধিপত্য তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেকে অভিমান করে দল থেকে দূরে সরে আছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গাইডলাইন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আমাদের বিশ্বাস, দলীয় সভাপতির নির্দেশনা এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারব। বিএনপিকে দ্বাদশের মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ ধরেই রাজনীতির মাঠে প্রতিরোধ-লড়াইয়ে আমাদের কৌশল রয়েছে।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার সংবিধানকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে চলছে। আর নির্বাচন পরিচালনা আওয়ামী লীগ করে না। আওয়ামী লীগ একটি দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয় মাত্র। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু হয়েছে এবং হবে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশ নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দু’টি বিষয়ে গুরুত্ব দেব। বিষয় দু’টি হলো- দল গোছানো ও বিভিন্ন জেলায় দলের ভেতর যেসব ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেগুলা দূর করা; আর মনোনয়নের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করা। এই দু’টি বিষয় নিয়েই দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনি ইশতেহারের কাজ চলছে।’
এবার শোকের মাসেও আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। এর পর সেপ্টেম্বর এলেই নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে চলে যাবে গোটা দেশ। কাজেই এখন নির্বাচনকে সামনে রেখেই সব কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সাবেকমন্ত্রী নানক।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি দিন শেষে নির্বাচনে আসবে। কারণ, নির্বাচন ছাড়া তাদের কাছে বিকল্প কোনো পথ খোলা নাই। যতই তারা আন্তর্জাতিক মহলে লবিস্ট নিয়োগ করুক, নির্বাচন সময় মতো সংবিধান অনুযায়ী হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন তারা বর্জন করেছে। তাতে কি লাভ হয়েছে? কোনো লাভ হয়নি। বরং নির্বাচনে অংশ নিলে তারা জনগণের কাছাকাছি যেতে পারত। আমাদের দেশে নির্বাচন হলো জনগণের কাছে যাওয়ার একটা মাধ্যম। মানুষ থেকে দূরে থেকে বিএনপির কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি মনে করি, এই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করবে এবং দিন শেষে নির্বাচনে আসবে।’
তিনি বিএনপিতে দু’টি ধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা জানি বিএনপিতে দু’টি ধারা রয়েছে। একটি ধারা নির্বাচনে কোনোভাবেই যেতে চায় না। আরেকটি শক্তিশালী ধারা রয়েছে, যারা নির্বাচনকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে চায়। বর্তমানে এই দু’টি ধারার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।’
নানক বলেন, ‘বিএনপি যদি আবার সেই ২০১৩/২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন করতে চায়, সেটা তারা করতেই পারে। কিন্তু নির্বাচন যদি প্রতিহত করতে চায় সেটি হবে তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন। কারণ, দেশের জনগণ এই ধরনের কোনো অন্তর্ঘাতমূলক বা কোনো অশান্তি কোনোভাবেই পছন্দ করে না।’
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দল হিসেবে সবসময় নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমাদের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনমত প্রতিফলিত হোক- এমনটাই আমরা চাই। গণমুখী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই এই দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। বিএনপিকে মাথায় রেখেই আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, একটি নির্বাচনে জয়ের পেছনে কিছু কারণ থাকে। আমরা মনে করি, যেকোনো জোটই নির্বাচনে আসুক না কেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করবে।
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ে তারা বলেন, দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধনে তারা যতই এক দফা দাবিতে সরকারকে হুমকি-ধামকি দিক না কেন, দিন শেষে জল ঘোলা করে নির্বাচনে আসবে। আমাদের কাছে এমন বার্তাই আছে। আমরা জানি, বিএনপি ও তার সমমনা জোটগুলো ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম