Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাটেনি নার্স সংকট


১২ মে ২০১৮ ২০:৩০

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড রয়েছে দুই হাজার ৬০০টি। এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার জন। ওয়ার্ড এবং বেড অনুযায়ী এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, ফ্লোরেও রোগীরা থাকছেন। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা দুই হাজার দুইশ পঞ্চাশ জন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সরকারি হিসেবে বেড রয়েছে ৮৫০। কিন্তু এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন এক হাজার দুইশ থেকে এক হাজার সাড়ে তিনশ’র মতো। আর নার্সের সংখ্যা ২০০ থেকে আড়াইশ জন।

রাজধানীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হাসপাতালে বেড রয়েছে ৬৭০টি। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়াতে এই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীদের স্থানান্তর করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। আর নার্সের সংখ্যা ৩০০ এর মতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি রোগীর বিপরীতে একজন চিকিৎসক এবং তিনজন নার্স থাকার কথা। কিন্তু সংশ্লিস্টরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা অনেক কম। যদিও গত কয়েক বছরে সরকার বেশ কয়েক হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তারপরও নার্সের স্বল্পতা রয়েছে। নার্স সংকটের প্রভাব গিয়ে পড়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ীও দেশে নার্সের স্বল্পতা প্রকট-বলেন সংশ্লিষ্টরা।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে জানা যায়, দেশে মোট ৯৮ টি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। যার মধ্যে ৪৩টি সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ১ টি এবং ৫৪টি বেসরকারি।

 বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৬ সালে  এই সরকার ১৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। চলতি বছরে আরও প্রায় ৫ হাজার নার্স ভাইভার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী একজন চিকৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকার কথা-আর আমাদের দেশে সেখানে একজন নার্সকেই দেখতে হয় একাধিক রোগীকে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে সারাদেশে প্রায় ৩৬ হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, রোগীর তুলনায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম-সবকিছুর বিপরীতেই নার্সের সংখ্যা অনেক কম।

কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে চিকিৎসক রয়েছেন ৯০ হাজার আর নার্স রয়েছেন ৩৬ হাজার। অথচ এই চিত্রটা উল্টো হওয়ার কথা ছিল। নার্স থাকার কথা ৯০ হাজার আর চিকিৎসক থাকবে তার অর্ধেকেরও কম।

এদিকে, সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দেশের অনেক হাসপাতালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবার কোথাও কোথাও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক বা নার্স নেই। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য পদক্ষেপ নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, নার্স ও রোগী অনুপাত গত কয়েক বছর ধরেই অনেক কম ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে অনুপাতটা কমে এসেছে, কারণ সরকার বেশ কয়েক হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে।

তাই আগের সংকটটা কমে গিয়েছে। তারপরও রোগীর তুলনায় দেশে নার্সের স্বল্পতা রয়েছে-এটা অস্বীকার করা যাবে না।

অপরদিকে বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. বশীর আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৩০ এর মতো। কিন্তু তারা সবাই হাসপাতালে নেই। ঠিক এই মুহূর্তে লেখাপড়ার জন্য আবার হাসপাতালে ডেপুটিশনে রয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো।

আমরা সেদিনও নার্সিং হেড কোয়ার্টারে গিয়েছিলাম হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা বাড়ানো জন্য। তাদের চিঠি দিয়েছি, যারা ডেপুটিশনে রয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য, একইসঙ্গে আরও বাড়তি নার্সের নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এত সীমিত নংখ্যক নার্স দিয়ে হাসপাতাল চলছে না।

বিজ্ঞাপন

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ও বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বক্ষব্যাধী হাসপাতাল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লিলি বেগম সারাবাংলাকে বলেন, নার্সের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে আমরা সামাল দিতে পারি না, হিমশিম খেতে হয়।

এখনও তৈরিই হয়নি সে পরিমাণ নার্স আর যারা তৈরি হয়েছেন তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না বলেন লিলি বেগম।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর