ফের ডুবল চট্টগ্রাম, অতি ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসের শঙ্কা
৫ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টিপাত তৃতীয় দিনও অব্যাহত আছে। সকালের টানা এক থেকে দেড় ঘন্টার বৃষ্টিতে আবারও ডুবেছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। নিচতলার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের। কাঁচাবাজার-দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় দিনে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে শ্রমজীবী মানুষকে।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাতভর নগরী ও আশপাশের এলাকায় কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়। শনিবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টার কিছু আগ থেকে টানা দেড়ঘন্টা মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। এতে প্লাবিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ূর সক্রিয়তার কারণে আজ (শনিবার) সন্ধ্যার পর থেকে নগরীতে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে, যা অব্যাহত থাকবে রোববার দিনভর। এতে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণের পাশাপাশি পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
তিনি বলেন, ‘আজ শহরে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মুষলধারে অর্থাৎ অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এটা আগামীকাল সারাদিন থাকবে। শহরে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’
সকালের বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুর এবং হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ও অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
সকালে নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারে বিক্রেতাদের শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্য পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। পাশের চকভিউ সুপার মার্কেটের নিচতলার দোকানগুলোর ভেতরে নোংরা আবর্জনা পানিতে ভাসছিল।
চকভিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাপড়ের দোকানে শুক্রবার রাতেও পানি ঢুকেছে। আজ আবারও ঢুকেছে। কাপড়চোপড় ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই আমাদের এমন যন্ত্রণার মধ্যে পড়তে হয়। এটা বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে। আদৌ কোনো সমাধান হবে কি না জানি না।’
চকবাজার কাঁচাবাজারের দোকানি মো. ইলিয়াছ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই চাক্তাই খাল থেকে ময়লা-আর্বজনা বাজারের ভেতরে এসে যায়। এলাকার কাউন্সিলর আছেন, মেয়র আছেন, পলিটিশিয়ানরা আছেন, সবাই জানেন। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। আমরা তো পাবলিক, আমাদের তো কিছু করার নেই। সিদ্ধান্ত তো উনারা নেবেন।’
ক্রেতা শাহআলম শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষেরও সচেতন হওয়া উচিৎ। নালা-ড্রেন পরিস্কার রাখা উচিৎ। চট্টগ্রাম শহর নাকি ব্যবসায়িক রাজধানী। অথচ এখানে এক পশলা বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়। সিটি করপোরেশন চেষ্টা করছে দেখছি, কিন্তু সেই চেষ্টার মধ্যে আন্তরিকতা এবং নগরবাসীর প্রতি ভালোবাসা দেখছি না।’
এদিকে সকালে কর্মস্থলে যাবার জন্য রাস্তায় বের হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শ্রমজীবীদের। রাস্তায় গণপরিবহন কম, রিকশা-অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছিল।
নগরীর নুর আহমদ সড়কে রিকশার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন নিউমার্কেট এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহাদাৎ হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ’৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা চাচ্ছে। একটু বৃষ্টি পড়লেই রিকশা, টেক্সির চালকরা আমাদের জিম্মি করে ফেলেন। রোদ থাকুক আর বৃষ্টি হোক, জিম্মি শুধু সাধারণ মানুষ।’
রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। অনেক এলাকায় পানি উঠে গেছে। পানি ঠেলে রিকশা নিতে পরিশ্রম বেশি। এরপর যাত্রীও রাস্তায় কম। এ জন্য ভাড়া কিছুটা বাড়তি দাবি করতে হয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) যেভাবে পানি উঠেছিল, সেভাবে আজ (শনিবার) সব এলাকায় পানি উঠেনি। সকালে ঘন্টা খানেকের বেশি ভারি বৃষ্টি হয়েছে। তখন আবার জোয়ারও ছিল। সে জন্য নিচু এলাকাগুলোতে পানি উঠে যায়। তবে আমরা দ্রুত নালা-নর্দমায় যেখানেই পানি আটকে থেকেছে, সেটা অপসারণ করেছি।’
সারাবাংলা/আরডি/ইআ