পানিবন্দি চট্টগ্রাম: দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু
৬ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: টানা বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের মতো পানিবন্দি হয়ে আছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। কিছু সড়ক হাঁটু পরিমাণ, আবার নিচু এলাকার সড়ক-অলিগলি কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশকিছু সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কর্মস্থলে পৌঁছাতে চাকরিজীবীদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
এদিকে বাঁশখালী উপজেলায় বৃষ্টিতে ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (৬ আগস্ট) সকালে নগরীর অক্সিজেন, ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও চাঁন্দগাও এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
এছাড়া কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, দেওয়ান বাজার, খলিফাপট্টি, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, বাদুরতলা, শুলকবহর, বাকলিয়া, ফিরিঙ্গিবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কালারপোল, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়েছেন চাকরিজীবীরা। বিভিন্ন বেসরকারি অফিস, শিল্প ও কলকারখানা খোলা থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে বাসা থেকে বের হলেও রাস্তায় গাড়ি ঠিকমতো না চলায় ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। কিছু গাড়ি চললেও তাতে বাড়তি ভাড়া দাবি করা হচ্ছে।
একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরি করেন সিরাজুল আলম। এক ঘন্টা ধরে দুই নম্বর গেইট এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির অপেক্ষায়। বাস তো দূরে থাক এক ঘন্টা ধরে অনেক সিএনজি বা রিকশা খুঁজেও অফিসে যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসে যাবেন বলে মনস্থির করেন।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ১০টায় আমার অফিস চেক ইনের সময়। এক ঘন্টা ধরে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। সিএনজি ওদিকে যাচ্ছে না। এক বুক পানি উঠেছে নাকি আগ্রাবাদের দিকে। দুইটা সিএনজি যেতে আগ্রহী হলেও ভাড়া চাচ্ছে ৮০০ টাকা। অথচ দুই নম্বর গেইট থেকে আগ্রাবাদের সিএনজি ভাড়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। বৃষ্টিও থামছে না।’
সিরাজ বলেন, ‘অফিসে কল দিয়ে বলে দিয়েছি দেরি হবে। গাড়ির জন্য অপেক্ষায় যে সময় নষ্ট হলো এতক্ষণে হেঁটে অফিস পৌঁছাতে পারতাম। প্রতিবছরই বর্ষাকালে চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতার এই দূর্ভোগে পড়তে হয়। এবার তো সীমা ছাড়িয়েছে। বাসার নিচেও এক হাঁটু পানি। এই দুর্ভোগ যে কখন শেষ হবে কে জানে।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদের সহকারি বিশ্বজিৎ চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে শহরে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এটা আরও দুইদিন থাকবে। শহরে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি ভালো না। চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা এবং নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’
এদিকে বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। লোকজনকে নিরাপদ সরে যেতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই পাহাড়ের পাশে বা নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। গতকাল (শনিবার) রাতে অনেককেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের সরিয়ে নিতে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে।’
বৃষ্টিতে দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ভারী বৃষ্টিতে মাটির বসত ঘরের দেয়াল ধসে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৫ আগস্ট) রাতে উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বৈলগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. মিজবাহ ওই এলাকার রফিউল আলমের ছেলে।
বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে মাটির দেয়াল ধসে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘরে তখন ওই শিশুর মা-বাবাও ছিলেন। কিন্তু তারা বেঁচে গেলেও তাদের একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আজ সকালে শিশুটির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
সারাবাংলা/আইসি/ইআ