টানা বৃষ্টিতে বরিশালে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে নগরবাসী
৭ আগস্ট ২০২৩ ২১:০৩
বরিশাল প্রতিনিধি: দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই থৈ থৈ পানি। কোথাও হাঁটু পানি জমেছে। কোথাওবা কোমর পানি। সেই নোংরা পানি পার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
পাশাপাশি বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকছে। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাইরে মানুষের আনাগোনাও কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বের হচ্ছেন না কেউ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বিরাজ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার (৭ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানি এবং দিনব্যাপী টানা বৃষ্টিতে নগরীর নিম্ন অঞ্চল ২৯ এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি কোথাও সরতে পারে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, নগরীতে ২৬ খাল রয়েছে। ওই খালাগুলো সঠিক সময়ে খনন না করায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টিপাত হলেই খালগুলোতে পানি নামতে পারে না। এছাড়া জোয়ারের পানিতে খালগুলোতে পানি ধারণক্ষমতা না থাকায় সেগুলো নগরীর নিম্ন অঞ্চলে উঠে প্লাবিত হয়ে যায়। এতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই এই জরাজীর্ণ খালগুলোকে অতি দ্রুত সংস্কার করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ছাড়াও নগরীর পলাশপুর, কলেজ অ্যাভিনিউ, হাসপাতাল রোড, কলেজ রোড, হাটখোলা, বটতলা, হাতেম আলী চৌমাথা, দপ্তর খানাসহ প্রায় সড়কেই জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে মানুষ।
মুসলিম গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বসতবাড়ির চারদিকে পানি। এই এলাকার পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র উৎস চৌমাথা খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেন নির্মিত হয়েছে অপরিকল্পিভাবে। এ কারণে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকাবাসীর জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।’
নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে না। এলাকার যা অবস্থা, তাতে যানবাহন চলা দায়। আবার পচা-নোংরা পানি মাড়িয়ে চলতে গেলে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে হয়।’
এদিকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত বরিশালে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ জানান, সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশালে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্তই ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, আষাঢ় মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। এ আবহাওয়া আগামী ৪৮ ঘণ্টা বিরাজ থাকতে পারে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর খালগুলোর সাথে সব বড় ড্রেনের সংযোগ। ড্রেনের মুখ ময়লায় আটকে যাওয়ায় নগরীর কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি নামছে না। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের সংযোগ মুখ ও খালগুলো পরিস্কার করার কার্যক্রম চলছে।’
সারাবাংলা/একে