Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির পক্ষেই বলেছিলেন কুবি ভিসি, ছাত্র বহিষ্কার নিয়মবহির্ভূত

মোহাম্মদ রাজীব, কুবি করেসপন্ডেন্ট
৮ আগস্ট ২০২৩ ০৯:২৮

কুবি: গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে দুর্নীতির পক্ষেই বক্তব্য দিয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। আর সেই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় নিয়ম না মেনেই তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি ইকবাল মুনাওয়ারকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন।

যদিও পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য শিক্ষাগত শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে বহিষ্কারের ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, মার্কেটিং বিভাগের ওই অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরিব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদরা দুর্নীতি নিয়ে কখনও কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাধা নয়।’

উপাচার্যের এই বক্তব্যকে সংবিধান পরিপন্থী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘উপাচার্যের ওই বক্তব্য সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতীয় আয়ের ২ থেকে ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেলভুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত আছি। উনি একজন উপাচার্য হয়ে এসব বক্তব্য দিয়েছেন, যেটা ঠিক হয়নি। ওনার এটা একটা অসদাচরণ। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

অন্যদিকে, উপাচার্যের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইকবাল মুনাওয়ারকে কোনপ্রকার আত্মপক্ষ সমর্থন ও শোকজ ছাড়াই সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ প্রকাশের পরপরই প্রক্টরিয়াল বডি ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রভোস্ট, ডিনসহ পদস্থ সবাইকে নিয়ে জরুরি এক সভায় ওই সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। এরপর বহিষ্কারের চিঠি দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রক্টরিয়াল বডি সুপারিশ করলেই কাউকে সরাসরি বহিষ্কার করা যায় না। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া, বিশ্ববদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তা উপস্থাপন ও অনুমোদন হওয়ার পর সিন্ডিকেটে তা তুলতে হবে। এক্ষেত্রে এসবের কিছুই করা হয়নি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে যদি কাউকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে এটা যে বিদ্বেষমূলক ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত তা সহজেই অনুমান করা যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্যই এটি করা হয়েছে।’

এই বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের মোবাইলে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/এমও

কুবি ভিসি টপ নিউজ দুর্নীতি বহিষ্কার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

মূল্যবোধ রক্ষায় সচেতনতা জরুরি
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৯

সম্পর্কিত খবর