রাজশাহীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামে কৃষকের মুখে হাসি
১০ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৫
রাজশাহী: প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাজশাহী জেলাতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে ভুট্টা কাটা-মাড়াই ও বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা ৯০০ টাকা এবং শুকনা ভুট্টা ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন জেলার কৃষক। বাজারে ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে ভুট্টা নিয়ে চাষিদের নানান কর্মযজ্ঞতা চোখে পড়ে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় এ জেলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। এ কারণে কৃষকরা অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। চাষিদের যেসব জমিতে আগে শোভা পেতো কাউন, তিসি, মরিচ, কচুসহ অন্যান্য ফসল সেসব জমিতে ভুট্টা চাষাবাদে উৎসাহী হচ্ছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার নয়টি উপজেলা ও মহানগরীর দুটি থানার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এবার ১৬ হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এ চাষাবাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন।
এ বছর জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমেও ভুট্টা লাগিয়েছেন। কৃষকদের চাষাবাদের তালিকায় রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা। যেমন এন এইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ ইত্যাদি রবি ও খরিপ মৌসুমি ভুট্টা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দেশে ভুট্টার মৌসুম দুটি। একটি রবি মৌসুম ও আরেকটি খরিপ মৌসুম। রবি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। খরিপ মৌসুমে এই অঞ্চলে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের পর ভুট্টা পেতে সময় লাগে প্রায় চার মাসের মতো। ভুট্টার বিঘা প্রতি ফলন হয় ২২ থেকে ২৫ মণের মত। এর বাজার মুল্য বাজার মূল্য এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা প্রতি মণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে বাগমারাতে। তিন হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৩১১ মেট্রিকটন। এছাড়া পুঠিয়াতে আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ৩২ মেট্রিকটন।
গোদাগাড়ীতে তিন হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ১২৭ মেট্রিকটন। পবাতে দুই হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ১৫ হাজার ৬৪২ মেট্রিকটন। চারঘাটে এক হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ১৬ হাজার ২৬৫ মেট্র্রিকটন। বাঘায় ৯৫২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ১০ হাজার ১৪০ মেট্রিকটন। দুর্গাপুরে ৮১৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে সাত হাজার ২৬৪ মেট্রিকটন। মোহনপুরে ১৭৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৩০৪ মেট্রিকটন। তানোরে ৩২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৩০৬ মেট্রিকটন। এছাড়া নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ২৬ হেক্টর জমিতে ১৭৪ মেট্রিকটন উৎপাদন ও মতিহারে ১১ হেক্টর জমিতে ৮১ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে।
ভুট্টা চাষিরা জানান, রাজশাহী অঞ্চল খরাপ্রবণ। অন্যান্য ফসলের মতো ভ্ট্টুাতে পানি লাগে না। স্বল্প সেচের ফসল হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টার জমিতে সেচ কম দিতে হয়। ফলনও বেশ ভালো হয়। প্রায় সময়ই বাজারে দাম ভালো থাকে এ ফসলের। ধান চাষের তুলনায় অনেকটা লাভজনক।
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় ভুট্টার ফল বাদে বাকি অংশ। গো-খাদ্যের জন্য উপযুক্ত ভুট্টার গাছ। অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায় এ ভুট্টা। রোগবালাই তেমন একটা নেই। মানুষের নানা ধরনের খাদ্য ও শিল্পজাত ছাড়াও বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এ ফসল। সব মিলিয়ে ভুট্টাতে ভাগ্য বদলাতে চান চরাঞ্চলের মানুষজন।
বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের চাষি ইউসুফ আলী জানান, প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগে থেকে অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করি। লাভজনক হওয়ায় সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়ে নেয়। এ বছরও নিজস্ব জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। খেতের ভুট্টা উঠতে শুরু করেছে মে মাসের শেষের দিক থেকে। বাজারে বেশ ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চাষি আবদুল মোতালেব বলেন, চরের মাটি বেলে যুক্ত। পানি ধরে রাখতে পারে না। ফসলের জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসল ভালো হয় না। তবে ভুট্টার জমিতে খুব একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। ধানের তুলনায় এ ফসল চাষ করাও অনেকটা সহজ। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছে চরাঞ্চলের ভুট্টার চাহিদাও ভালো। এ কারণে বিক্রি করতেও সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, প্রতি বিঘার বিপরীতে তাদের খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। এরমধ্যে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় গড়ে ৪০-৪৫ মণ হারে। প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ হিসাবে।
জেলা কৃষি সপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ভুট্টার আয়ুকাল ১১০ থেকে ১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন ও চাহিদা থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। দিন যতোই যাচ্ছে, ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। তুলনামূলক স্বল্প খরচে এ ফসল চাষ করা যায়। লাভ বেশি হয়। এছাড়া সেচ কম লাগে। এসব বিবেচনায় প্রান্তিক মানুষের কাছে ভুট্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সারাবাংলা/এনইউ