Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু, প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ আগস্ট ২০২৩ ১৭:১৪

তাজুল ইসলাম, ফাইল ছবি

ঢাকা: ডেঙ্গু এখন শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতেও। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এ বছর বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলেই সারাদেশেই এডিস মশার প্রজনন পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে দুঃখজনক মৃত্যু হচ্ছে। যেটিতে আমরা ব্যথিত হচ্ছি। এডিস মশা দমনে বিশ্বে যে সব তথ্য উপাত্ত রয়েছে তা পর্যালোচনা করছি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে বিধি বিধান আছে সব পদ্ধতিই আমরা অনুসরণ করছি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ ব্রিফিং এ এসব তথ্য তুলে ধরেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই অবহিত যে, অন্যান্য বছর যদিও ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ কিছু-কিছু শহরকেন্দ্রিক ডেঙ্গু মশার আক্রমণ আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু এ বছর সারাদেশেই এডিস মশার প্রজনন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দুঃখজনক মৃত্যুও হচ্ছে, যেটি আমাদের ব্যথিত করছে। এই বিষয়ে সারা পৃথিবীতে যে সমস্ত প্রচলিত তথ্য-উপাত্ত আছে, এডিস মশাকে মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেসব বিধি-বিধান আছে, সেগুলো আমরা অনুসরণ করছি। পৃথিবীর বিখ্যাত-বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব গবেষণা করেছে, আমরা সেগুলোও সংগ্রহ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এডিশ মশাকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে আমরা এ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার মশার আধিক্য বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। শহরকেন্দ্রিক এটির মাত্রা অতিরিক্ত। আমাদের অন্যান্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভার অনেক জায়গায় লোক আক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণে আমরা আজকে একটি জরুরি সভা ডেকেছি।’

ডেঙ্গু নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন সরকার বা সিটি করপোরেশনগুলো আগে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এ ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই ঠিক নয়। তারা যখন আমাদের সামনে কথা বলে এই কথাগুলো বলেন না। আগে থেকে কী ব্যবস্থা নেবে? আমরা জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে সভা করেছি। সেই সভাতে কিটতত্ত্ববিদরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তো তখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দুর্বলতা আছে বলে বলেননি। আমাদের কোনো পদক্ষেপে ঘাটতি আছে কিনা, সেটিও বলেননি।’

বিজ্ঞাপন

যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল সেটি নেওয়া হয়েছিল দাবি করে এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো বছরে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব সময় কিন্তু মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মশা এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায় বৃষ্টি যখন আরম্ভ হয় ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই থেকে। এজন্য আমরা জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে সভা করেছি। সে সভায় তো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি (ডেঙ্গু) সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। সম্পূর্ণভাবে আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এটি হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, আজকের তথ্য হলো পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে ডেঙ্গু মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়েছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, ‘পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তো আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার সেগুলো নিয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সিঙ্গাপুর অত্যন্ত পরিষ্কার শহর কিন্তু সেখানেও এই মুহূর্তে আমাদের কাছে তথ্য আছে প্রায় পাঁচ-সাত হাজারের মতো আক্রান্ত আছে। বিভিন্ন দেশেই আছে। আজকে আমরা যেভাবে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সিটি করপোরেশনসহ যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, সবাই মিলে কাজ করছি। এর পাশাপাশি জনগণকে যেন সম্পৃক্ত করা যায় আমরা সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা টেলিভিশনে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। কীটনাশক ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমি একটি সাধারণ পদ্ধতির কথা বলি। আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। মশারির ভেতরে অসংখ্য মশা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর স্প্রে করা হয়েছে। কয়েক মিনিট পর দেখা হয়েছে মশা মারা গেছে কিনা। একইভাবে লার্ভাও দেখা হয়েছে। সেগুলো মারা গেছে কিনা- এগুলো পরীক্ষা করে দেওয়া।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহর। সারা বাংলাদেশের আউটার জেলাগুলোতে হয়ত এ প্রথম তারা আক্রান্ত হচ্ছে। সতর্কতার জন্য একটু সময় লাগতে পারে কিন্তু ঢাকা শহরে তো আমি মনে করি সব সচেতন হয়ে যেতে পারি। এখানে সব শিক্ষিত লোকজন।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সচেতনতা আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে ব্যাপক পর্যায়। আমরা যদি সচেতন না করতে পারতাম তাহলে আজকে হয়তো পাঁচ-দশ লাখ ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়ে যেত। সচেতন হয়েছে বলে (হয়নি) কিন্তু আমাদের লক্ষ্যমাত্রা যদি পৌঁছাতে হয় তাহলে আমাদের সকল জনগণকে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিভাগীয় কমিশনারদের, ডিসি, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রদেরকে সংযুক্ত করা হবে। যেহেতু এডিস মশা এখন শুধুমাত্র ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সে কারণে সারা দেশব্যাপী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এখনই সবাই মিলে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আমরা সিটি করপোরেশনগুলোকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। অন্যান্য জেলাতেও আর্থিক এবং কারিগরি কী কী সহায়তা দিতে পারি, সে জন্যই এই সভা করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/জেআর/একে

এডিশ মশা ডেঙ্গু তাজুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর