প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পেশাভিত্তিক উন্নয়নের উদ্যোগ
১১ আগস্ট ২০২৩ ১০:১৫
ঢাকা: দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পেশাভিত্তিক জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক পেশাজীবীর জীবনমান উন্নয়ন (দ্বিতীয় ফেইজ)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, আগামী ১৬ আগস্ট প্রস্তাবটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের মূল্য কথা হলো কাউকে পেছনে ফেলে নয়। অর্থাৎ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই্ যেতে হবে। সেই জন্য যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, কম আয়ের পেশার সঙ্গ যুক্ত তাদের উন্নয়ন করা না গেলে তারা পিছিয়ে থাকবে। এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি মূলত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষত যারা আদি ক্ষুদ্র ব্যবসা বা পেশায় নিয়োজিত যেমন, কামার, কুমোর , নাপিত, বাশঁ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাশাঁ বা পিতল প্রস্তুতকারী এবং জুতা মেরামত বা প্রস্তুকারী, বাদ্যযন্ত্র, নকশী কাঁঁথা, লোকজযন্ত্র, শিতলপাটি-শতরঞ্জী তৈরিসহ এ ধরনের সনাতন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব জনগোষ্ঠীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জীবনমান উন্নয়নের জন্য দেশের ৬৪ টি জেলার ১৫২টি উপজেলার ১২ হাজার জনকে ১০ দিনের সফট স্কিলস প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আধুনিক, টেকসই পণ্য উৎপাদন পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার ও বিপণন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি প্রান্তিক শিল্প প্রদর্শণী ও বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রান্তিক পেশাজীবীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা, নায্যমূল্যে নিশ্চিত ও প্রচারনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পেশাজীবীদের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়, সফটস্কিলস প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রান্তিক আদি পেশাজীবীদের ১২ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে এককালীন ১৮ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত: প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার জন জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা হ্রাস করে ব্যয় প্রাক্কলন য়ৌক্তিক আকারে নির্ধারণ করার বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণের কোন মডিউল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযুক্ত করা হয়নি। এক্ষেত্রে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মডিউল অনুসরণ করতে হবে।
পিইসি সভায় প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করে প্রকল্প এলাকায় নিড এ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রস্তাব নির্ধারণ করা যেতে পারে। বিবিএস, সমাজসেবা অধিদফতর বা অন্য কোন উৎস হতে সরবরাহ করা তথ্যের ভিতিতে যথাযথভাবে উপকারভোগী নির্বাচন করে উপকারভোগীদের নামের তালিকা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করা যেতে পারে।
মতামতে আরও বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের মাঝে প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া অনুদান খাতে ২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। অনুদান বিতরণে কোন নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়নি। অনুদান হ্রাস করা এবং অনুদান দেওয়ার যথাযথ পদ্ধতি নিয়ে সভায় আলোচনা করা প্রয়োজন। অনুদানের পরিবর্তে উপকরণ দেয়া যায়। এছাড়া অনুদান দেওয়ার বিষয়ে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে অডিট আপত্তি রয়েছে। সেমিনার বা কনফারেন্স খাতে এক কোটি ৭১ লাখ টাকা, অডিও ভিডিও খাতে ৬০ লাখ টাকা এবং প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ সব খাতের ব্যয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, যেহেতু প্রস্তাবিত প্রকল্পে গাড়ি হায়ারিং (চুক্তিভিত্তিক) করা হবে, সেহেতু পেট্রোল, ওয়েল, লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানি এবং মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ) খাত গুলো বাদ দিতে হবে। পণ্য ক্রয় রিভলিং ফান্ড খাতে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই খাতের টাকা সরকারের কোন নীতিমালার জন্য কিভাবে দেওয়া হবে এবং আদায় করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
সারাবাংলা/জেজে/এনইউ