Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাংবাদিক ইকবালকে বহিষ্কারের পেছনে ভিসির ব্যক্তিগত ক্ষোভ!

মোহাম্মদ রাজীব, কুবি করেসপন্ডেন্ট 
১১ আগস্ট ২০২৩ ১৯:১৬

কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দুর্নীতি নিয়ে দেওয়া বিতর্কিত মন্তব্য উদ্ধৃতি করে সংবাদ প্রকাশের পর বহিষ্কার করা হয়েছে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে। ভুক্তভোগী ইকবালের দাবি, শুধুমাত্র বক্তব্য উদ্ধৃতি নয়, এর আগেও উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন উপাচার্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সপ্তম উপাচার্য হিসেবে কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের প্রথম দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের বুকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। তবে এ সব বুলি শুধুমাত্র আশা হয়েই থেকে যায়। অনিয়ম করে একের পর এক নিয়োগ, পক্ষপাতিত্ব আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল মনোয়ার। সেসব কারণে আগে থেকেই ইকবালের প্রতি উপাচার্যের ক্ষোভ ছিল। সবশেষ বহিষ্কারাদেশের মধ্য দিয়ে সে ক্ষোভেরই তিনি বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে, ২০১৯ এর ডিসেম্বরে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের পরামর্শ দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির ঘোষণার পরপরই সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের ঘোষণা দেয় কুবি কর্তৃপক্ষ। তবে সে সান্ধ্যকালীন কোর্সেরই নাম পরিবর্তন করে ‘উইকেন্ড’ কোর্স পরিচালনা করে কুবি। স্বয়ং উপাচার্য নিজেই সে কোর্সের ক্লাস নিতেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল। এরপরই তার ওপর ক্ষিপ্ত হোন উপাচার্য আবদুল মঈন। বিভিন্ন সাক্ষাতেও তিনি ইকবালকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৈরি করার অঙ্গীকার করেন। তবে সে অঙ্গীকার শুধুমাত্র কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ নিয়ে গত বছরের ৯ জুলাই দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘কুবিতে গবেষণা সম্প্রসারণ দফতরের বেহাল দশা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল মনোয়ার।

যোগদানের দেড় মাসের মাথায়ই বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গ করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকীকে। আইনে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ন্যূনতম সহযোগী অধ্যাপকের কথা বলা থাকলেও নিজের খেয়াল খুশিমতো ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী রানাকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন উপাচার্য। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০ জন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। নিয়োগের পর থেকেই ওই প্রক্টরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে সময়ে সময়ে। চলতি বছরের ১৯ মার্চ ‘এক ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরেই বিতর্কিত কুবি প্রশাসন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল।

এরপর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে অনুষ্ঠানের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল।

কৃচ্ছ্রতাসাধনের নামে সপ্তাহে অতিরিক্ত একদিন বৃহস্পতিবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে কুবি প্রশাসন। এর ফলে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়টি নিয়ে গত ২৩ মে সংবাদ প্রকাশ করেন ইকবাল। সে সংবাদের বক্তব্য জানতে উপাচার্যের কাছে গেলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চান না বলে ইকবালের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন।

এ ছাড়াও ইকবাল বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এসব সংবাদের কারণে উপাচার্য তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন বলে দাবি করেন ইকবাল। তিনি বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের কারণে উপাচার্য আমার বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। আমি ওনার অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় বিভিন্ন সময়ই তিনি আমার প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। সবশেষ বহিষ্কারাদেশ দিয়ে ক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো মতামত নেই। অপরাধ করেছে তাই বহিষ্কার করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/একে

ইকবাল কুবি ছাত্র কুমিল্লা থেকে বহিষ্কার টপ নিউজ বহিষ্কার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর