হুমকি দিয়ে ঘুষ চাইলেন চিকিৎসক, অভিযোগ করে ‘বিপদে’ ভুক্তভোগী
১৪ আগস্ট ২০২৩ ০৯:১৫
রংপুর: রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে আরেক চিকিৎসককে অন্যখানে বদলির হুমকি দেওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, হাসপাতাল পরিচালক ও থানায় অভিযোগ দিয়ে উল্টো বিপদে পড়েছেন ভুক্তভোগি ওই চিকিৎসক নিজেই। হাসপাতালের পরিচালক ঘটনার তদন্ত চলমান থাকার কথা বললেও ব্যাক ডেটের তারিখ দিয়ে অভিযোগকারী চিকিৎককেই অন্য শাখায় বদলি করে দিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, বিষয়টি চাঁদা দাবি নয়, ঘুষের পর্যায়ে হওয়ায় দুদকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর অভিযুক্ত চিকিৎসক বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ভুক্তোভোগির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছেন অভিযুক্তরা।
জানা গেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে গত চার বছর দায়িত্ব পালন করছেন ডা. আলী রাজিব মোহাম্মদ নাসের। তার অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে তাকে বদলির হুমকি দিয়ে আসছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলীর ঘনিষ্ঠ একটি চিকিৎসকদের গ্রুপ। এরই মধ্যে গত ৩ আগস্ট অফিস চলাকালীন সময়ে সহকর্মী আউটডোর মেডিকেল অফিসার মাসুদ পারভেজের কক্ষে ডেকে নিয়ে তার সামনে ২ লাখ চাঁদা দাবি করেন হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজার রহমান পাভেল। টাকা না দিলে তাকে হাসপাতালে অন্যখানে বদলি করে দেবেন বলে হুমকি দেন।
এরপর ৮ আগস্ট মেডিকেলের ক্যান্টিনে ডা. পাভেল ও ডা. মাসুদ পারভেজের সঙ্গে হাসপাতালের প্রভাবশালী চিকিৎসক চর্ম ও যৌন বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশফাকুল হক খন্দকার পুলক যুক্ত হয়ে টাকা দিতে চাপ দেন। একপর্যায়ে ডা. নাসের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ক্যান্টিনেই হট্টগোল বাঁধে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক নাসের বলেন, ‘তিন চিকিৎসক মিলে আমাকে সেদিন ক্যান্টিনে অন্যান্য চিকিৎসকদের সামনে হুমকি দিয়েছে, আমি কিভাবে হাসপাতালে চাকরি করি তারা সেটা দেখবে। এমন পরিস্থিতিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এজন্য ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও নিরাপত্তা চেয়ে ৯ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, হাসপাতাল পরিচালক ও রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় অভিযোগ করেছি।’
এদিকে অনবরত হুমকি পাওয়া নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে উল্টো বিপদে পড়েছেন ভুক্তভোগী চিকিৎসক নাসের। ১২ আগস্ট তার অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে কার্যালয়ে গেলে পরিচালক ডা. ইউনুস আলী তার হাতে ধরিয়ে দেন বদলির আদেশ। দায়িত্ব দেওয়া হয় জরুরি বিভাগে। বদলির আদেশে তারিখ উল্লেখ করা হয় ৮ আগস্ট।
চিকিৎসক নাসের বলেন, ‘আমি প্রতিকার চেয়ে পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করে তো উল্টে বিপদে পড়ে গেলাম। পরিচালক স্যারের কক্ষে প্রবেশ করামাত্রই আমার হাতে বদলির আদেশ ধরিয়ে দেওয়া হলো। চিঠি পড়ে জানলাম যে আমাকে চারদিন আগেই নাকি বদলি করা হয়েছে অর্থাৎ ৮ আগস্ট যেদিন ক্যান্টিনে অভিযুক্ত ৩ চিকিৎসক আমাকে মারধর করতে উদ্যত হয়। আমাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে অফিস করতে পারছি না।’
হাসপাতাল পরিচালক ডা. ইউনুস আলী এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, তাই তদন্ত চলাকালীন সময়ে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।
থানায় অভিযোগের বিষয়ে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি চাঁদাবাজি নয়, ঘুষের পর্যায়ে পড়ে। তাই ওই চিকিৎসককে দুদকে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেই ঘটনার প্রতিবেদনে যদি আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তবে যাদের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তাদের কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের দাবি হাসপাতালে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে মানহানির অভিযোগ এনে চিকিৎসক আলী রাজিব মোহাম্মদ নাসেরের বিরুদ্ধে থানা ও হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেছেন অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক পাভেল ও পুলক।
সারাবাংলা/এমও