Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মশা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ আগস্ট ২০২৩ ১৯:১২

ঢাকা: ঢাকায় ডেঙ্গুতে ক্রস-ইনফেকশন হচ্ছে। ৯৫ শতাংশ এডাল্ট মশা না মারতে পারলে বর্তমান ব্রিডিং কমানো সম্ভব নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউএলভি পদ্ধতিতে পূর্ণবয়স্ক মশা মারতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কীটতত্ববিদরা।

শনিবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কেন এই ডেঙ্গু মহামারি? পরিত্রাণ কোন পথে?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের কয়েকজন শীর্ষ কীটতত্ত্ববিদ এমন মন্তব্য করেন। আয়োজনে বাংলাদেশ ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ নামের একটি সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন ব্যর্থ বলে মন্তব্য করছেন তারা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে খণ্ডিতভাবে ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এ সময় তারা বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ। সেই সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক মহাসচিব কীটত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমানে যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি তা প্রাকৃতিকভাবে বেড়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কমে যাবে। সিটি করপোরেশন যে কার্যক্রম দেখাচ্ছে তাতে মূলত কোনও কাজ হচ্ছে না। কীটতত্ত্ববিদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা কথা বলছি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ম্যান-মসকিউটো এফেক্ট কমাতে হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ মশা ৩/৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই এখন উড়ন্ত মশা মারার বিকল্প নেই। ফগিংয়ের মাধ্যমে ২০ শতাংশ মশাও মারা সম্ভব নয়। যে সময়ে ফগিং করে সেসময় মশা বিভিন্ন দিকে ওড়াউড়ি করে। তাই ইউএলভি ফর্মুলার মাধ্যমে এডাল্ট মশা মারতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গুতে যেভাবে ক্রস-ইনফেকশন হচ্ছে তাতে ৯৫ শতাংশ অ্যাডাল্ট মশা না মারতে পারলে বর্তমান ব্রিডিং কমানো সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ প্রত্যেকেই প্রচারণা চালাচ্ছে যে, দূষিত পানিতেও এডিস মশা জন্মায়। এর কোনো বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স তারা দেখাতে পারবে না। এডিস মশা কখনই দূষিত পানিতে জন্মায় না। এ ছাড়াও বলা হচ্ছে— তিনদিনের জমা পানিতে এডিস মশা জন্মায়, কিন্তু বিষয়টি তা নয়। এডিস মশা জন্মাতে অন্তত ৭ দিন সময় লাগে।’

মশা মারার নামে তামাশা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তারা মশা মারতে যে কীটনাশক প্রয়োগ করছে, তার প্রয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। তারা মশা নিধনে পানিতে হাঁস, ব্যাঙ ছাড়ছে। মশা নিধন করতে ফড়িং ছাড়ছে, এসব কার্যক্রম খুবই হাস্যকর, লোক দেখানো। এসব কার্যক্রমের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’

বিটিআই নিয়ে মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিটিআই নামে যা এনেছে তা পয়জন। কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনে এ বিটিআই আনা হয়েছে এবং তা প্রয়োগও করা হয়েছে। বিটিআইয়ের বিভিন্ন ক্লাসিফিকেশন আছে। যেটা উত্তর সিটি করপোরেশন এনেছে সেটা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সেটা পাবলিক হেলথের জন্য নয়, কৃষির জন্য। সিটি করপোরেশন একটি চক্রে আটকে আছে। তারা বিভিন্ন সময় পাখি ছাড়ে, ব্যাং ছাড়ে কিন্তু কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না।’

কীটতত্ত্ববিদ সাইফুল আলম বলেন, ‘২০১৬ সালের পর থেকে সারা বছরই কম বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তার মানে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। আমরা কত দিনের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণ করব সেটি নির্ধারণ করতে হবে।’

সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশকে নিয়ে একটি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম নেওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের এখানে পরীক্ষিত কোনে মশা কন্ট্রোল পদ্ধতি চালু নেই। মশা নিধনের ক্ষেত্রে আমরা ইনডিশিসনে ভুগি। আমরা কি ফগিং করব নাকি লার্ভিসাইড নাকি টিকা আনব। জনগণের বাড়ি-বাড়ি যদি ইনসেকটিসাইড পৌঁছে দেওয়া যায়। তবে আমরা জনগণের হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র দেইনি, দেওয়া হয়নি কোনো ট্রেনিং। কিন্তু বলছি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আগে জনগণের হাতে মশা মারার অস্ত্র দিতে হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বলেন,‘ মশাকে আমরা আসলে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছি না, যে কারণে মশার কবল থেকেও আমরা বের হয়ে আসতে পারছি না। কাল (২০ আগস্ট) মশা দিবস উপলক্ষেও যদি আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলেও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাজে আসত।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার কারণে এখন শহরের মানুষেরা মোটামুটি সচেতন হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। এজন্য সরকারের কাছে আমার আহ্বান মশা দিবসকে কেন্দ্র করে এই বছর না হোক, আগামী বছরগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু কার্যক্রম ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার।’

ব্যক্তি সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু ফয়েজ মো. আসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে কি প্রটেকশন নিয়েছি, সেটি আমাদের ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার আমার জন্য কী করছে সেটা পরের বিষয়। কারণ আমি যদি ফুল হাতা জামা পড়ি, আমি যদি দরজা-জানালাটা সময়মতো বন্ধ করে দেই বা স্ক্রিন ব্যবহার করি, দিনে ঘুমানোর সময় আমি যদি মশারি ব্যবহার করি, এসব ক্ষেত্রে আমাকে মশা কামড়ানোর সম্ভাবনাটা অনেকাংশেই কমে যাবে।’

গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এমনকিছু লোক থাকতে হবে, যারা সবসময় এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করবে। কারণ মশা প্রতিনিয়ত তার ধরন পাল্টাচ্ছে। আমরা যে ওষুধগুলো ব্যবহার করছি, সেগুলো কি নতুন ধরনেও কার্যকর হচ্ছে কিনা, সেগুলোও গবেষণা করতে হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

টপ নিউজ ডেঙ্গু মশা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সম্পর্কিত খবর