‘খুনি তারেককে মানুষ ছাড়বে না, সাহস থাকলে দেশে আসুক’
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২২
ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু আসামি কারাগারে আছে কিন্তু মূল হোতা (তারেক রহমান) তো বাইরে। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। ওর সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে লম্বা লম্বা কথা বলে। সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক? বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না।’
সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহিদ বেদিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। শুরুতে ২১ আগস্ট নিহত সব শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত পাঠ করা করা। সভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হাতে দলের নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড থেকে অত্যাচার নির্যাতনের চিত্রসহ অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটাই তো বিএনপির চেহারা, এটাই তো বিএনপির চরিত্র। এর নেতৃত্ব খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াই তো দিচ্ছে। হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে ক্ষমতায় থাকতে। মানুষকে কি দিয়েছে? মানুষ তো ক্ষুধার্ত ছিল। এদেশে ক্ষুধা দারিদ্র্য রোগে চিকিৎসা পায় না। দুর্ভিক্ষ প্রতিনিয়ত ছিল কিন্তু তারপরও তো অর্থসম্পদ বানিয়ে যথেষ্ট ফুলেফেঁপে উঠেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে। আর কিছু আছে তাদের ভাড়া করা, যারা মানবাধিকারের কথা বলে। যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, ৩ নভেম্বর আপনজন হারিয়েছি। আমার আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী যারা জীবন দিয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে বিএনপি জামায়াতের হাতে। তাদের মানবাধিকার কোথায়? সেই পরিবারগুলি এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা বিচার পাইনি। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সংবিধানে আছে, দেশের আইন আছে যেকোন হত্যার বিচার হবে। তাহলে আমরা কেন বঞ্চিত ছিলাম?’
‘আমি তো ১৯৮১ সালে মামলা করতে পারিনি। আমার বাবা মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে পারিনি। এমনকি জিয়াউর রহমান আমাকে ৩২ নম্বরে ঢুকতেও দেয়নি। আমি যে বাবা-মার জন্য দোয়া করবো সেই সুযোগও আমাকে দেয়নি। তারা একেকটা বাড়িতে রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। তাদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা দেখি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা বলে? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? কাদের শিখানো বুলি তারা বলে? এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে। যার মূল হোতাই হচ্ছে এই জিয়াউর রহমান আর খালেদা জিয়া-তারেক জিয়াসহ জামায়াতে ইসলামী, যুদ্ধাপরাধী; একাত্তরে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তারা এখনও করে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আমরা করি। কিন্তু আমরা তো বিচার পাইনি। ৩৩ বছর সময় লেগেছে এই বিচার পেতে আমাদের। আমরা কি অপরাধ করেছিলাম? আমাদের মানবাধিকার আমার বাবা ভাই হত্যার বিচার পাব না। সেই অধিকার টুকু আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতে জোট শাসনামলে ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ নির্মমভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (মামলা) বিচার হয়েছে। বিচারের রায় হয়েছে। কাজেই এই রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ বারবার আমাকে রক্ষা করেছেন এবং আমাকে সুযোগ দিয়েছেন এদেশের মানুষের সেবা করতে। তাই ২০০৮ এর নির্বাচনে সরকারে আসার পর মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণেই কাজ করি। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে। কারণ জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন।’
প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট, নৃশংস গ্রেনেড হামলা দিবস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কালো দিন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার (২১ আগস্ট) ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী পালন করছে আওয়ামী লীগ। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে মূল টার্গেট করে হত্যার লক্ষ্যে হামলা চালানো হলেও অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। দলীয় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান।
সারাবাংলা/এনআর/এমও