Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যবিপ্রবির সাবেক ভিসিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২৩ ২১:১০

যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এর সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তারসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (২১ আগস্ট) যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের দফতরে এই এজাহার দায়ের করা হয়। অবৈধভাবে নিয়োগের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন বাদী হয়ে দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় নিয়মিত মামলা হিসেবে এই এজাহার দায়ের করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার মামলায় ২ নং আসমি। মামলায় ১ নং আসামি হলেন, যবিপ্রবির পূর্ত দফতরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আব্দুর রউফ, এবং ৩ নং আসামি হলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. কামাল উদ্দিন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মো. আব্দুর রউফকে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগ দিয়ে তাকে অক্টোবর/২০০৯ হতে জুন/২০২২ পর্যন্ত বেতনভাতা বাবদ সর্বমোট ৬১,৩১,৭৩২.৫২/- (একষট্টি লাখ একত্রিশ হাজার সাতশত বত্রিশ টাকা বায়ান্ন পয়সা) টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দিয়ে সরকারের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এটি দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইকাজে প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তারকে সহযোগিতা করেছেন ৩ নং অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

দুদকের এজহারে বলা হয়, দুর্নীতি, প্রতারণা, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদচারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, নিয়োগ নীতিমালা ও ইউজিসির নির্দেশনা সুষ্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন এই তিন অভিযুক্ত।

জানা গেছে, যবিপ্রবির ২০০৯ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আবেদন করেন মো. আব্দুর রউফ। নিয়োগের জন্য গঠিত ৩ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপাচার্য ড. মো. আব্দুস সাত্তার। সেই বাছাই বোর্ডের আরেক সদস্য ছিলেন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন। ওই বছরের ২২ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ সময় আরও তিন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মো. আব্দুর রউফের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার পরও বাছাই বোর্ড তাকে নিয়োগের সুপারিশ করেন।

অভিযোগে আরও জানানো হয়, সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদটি বিজ্ঞাপিত না হওয়া সত্ত্বেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় মো. আব্দুর রউফকে বিজ্ঞাপিত সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এর বিপরীতে সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্যে রিজেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত দেয়।

প্রফেসর ড. মো. আব্দুস সাত্তার নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর তথা প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থেকে এবং রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি হয়ে যবিপ্রবির অনুমোদিত নিয়োগ নীতিমালা সুষ্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে মো. আব্দুর রউফ কর্তৃক সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আবেদন না করার পরও অবৈধভাবে তাকে সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগ দেন।

বিজ্ঞাপন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ এর ৩২ (৩) ধারা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধির ৬(৪) বিধি অনুযায়ী বাছাই বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত ভিন্ন হওয়ায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে চ্যান্সেলরে কাছে পাঠানোর বিধান থাকলেও দুদকের অনুসন্ধান ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় উঠে আসে, প্রফেসর ড. মো. আব্দুস সাত্তার নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর তথা প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থেকে এবং রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি হয়েও বিষয়টি চ্যান্সেলরের কাছে পাঠাননি। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট আইন ও সংবিধি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন। শুধু তাইই নয়, তিনি রিজেন্ট বোর্ডের ওই অবৈধ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি নিজে নোটশিটের মাধ্যমে অনুমোদন করেন এবং মো. আব্দুর রউফকে ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে অবৈধভাবে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশ দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ইস্যু করেন।

সে পরিপ্রেক্ষিতে মো. আব্দুর রউফ উল্লেখিত তারিখে সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে যোগদান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই সাল ও মাসের ১৪ তারিখে অফিস আদেশের মাধ্যমে তার যোগদানপত্র গ্রহণ করেন। কিন্তু সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে যবিপ্রবিতে বেতন স্কেলের নবম গ্রেড সেকশন অফিসার গ্রেড-১ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদের জন্যে কোনো মঞ্জুরি বা বেতন বরাদ্দ ছিল না।

পরে আব্দুর রউফ সেকশন অফিসার পদে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিলেকশন গ্রেডসহ বিভিন্ন সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বিভাগীয় প্রার্থীর সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সালে সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে এবং ২০২১ সালে উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।

২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আব্দুর রউফের বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনসুন্ধানে উঠে আসে। পরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের চলতি মাসের ১৬ তারিখের স্মারক নং-০০.০১.৪১০০.৬৪৩.০১.২৩৫.২১.২৯৮৬৮ এ নির্দেশিত হয়ে গতকাল সোমবার যশোর সমন্বিত কার্যালয়ে এই মামলা দায়ের করা হয়।

এ প্রসঙ্গে দুদক যশোর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল আমিন জানান, প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়ার পর গতবছর থেকে দুদক যশোর অফিসের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান ও রেকর্ডপত্র যাচাই করা হয়। এ সময় এজহারে উল্লেখিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মামলা হয়েছে। দুদকের প্রধান অফিসে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে।

তিনি আশা করেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা পাওয়া যাবে। তিনি দুদক আইন অনুসারে ১৮০ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন আশা করা যায়। তদন্তকালে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকেও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সারাবাংলা/একে

দুদক মামলা যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর