গাজীর আমলে যেভাবে বদলে গেছে ভোলাব ইউনিয়ন
২২ আগস্ট ২০২৩ ০০:১৫
রূপগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন ভোলাব। ঢাকা বিভাগের পূর্ব সীমানায় স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যার দুই তীরের অধিকাংশ মানুষের এক সময়কার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নদীকেন্দ্রিক। ভোলাবও ছিল তাই। ফলে এখানে ছিল না সড়কপথে যোগাযোগের উপযুক্ত ব্যবস্থা। একটা সময় সবখানে যোগাযোগব্যবস্থা সড়কনির্ভর হয়ে পড়লে তখন ভোলাব হয়ে পড়ে পিছিয়ে পড়া জনপদ। যোগাযোগহীনতায় অগ্রগতি হয়নি অন্য সব খাতেও। গত দেড় দশকে সেই ভোলাব ইউনিয়নের চেহারা বদলে গেছে। এখন ভোলাব ইউনিয়নও দেশের যেকোনো এলাকার সঙ্গে উন্নয়নের দিক থেকে পাল্লা দিতে সক্ষম।
সরেজমিনে ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে সড়কসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র। ইউনিয়নের নাগরিকরা বলছেন, সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে ভোলাব ইউনিয়নের জনজীবন। আগে এই ইউনিয়নে পাকা রাস্তা না থাকলেও এখন প্রায় সবখানেই সে চিত্র বদলে গেছে। যোগাযোগ সহজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আর বদলে যাওয়া এই ভোলাব ইউনিয়নের নেপথ্যের রূপকার হিসেবে তারা বলছেন সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর নাম।
ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশেই অবস্থান আতলাপুর বাজারের। সেই বাজারে প্রবেশের একটু আগেই এই প্রতিবেদকের কথা হয় ইউসুফ আলী নামে একজন দুধবিক্রেতার সঙ্গে।
ইউসুফ আলী বলেন, দুধ নিয়ে রূপগঞ্জে বিক্রি করি। কিন্তু আগে দুধ রূপগঞ্জে বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে কষ্ট হয়ে যেত। রাস্তার যে অবস্থা ছিল তাতে পথেই অর্ধেক শেষ হয়ে যেত। আবার আমাদের এখান থেকে যারা দুধ কিনে নিয়ে যেত, তাদের অনেকেই বলত যে রূপগঞ্জ পৌঁছানোর পরে বাসায় ফিরে দেখে দুধ নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ ছিল।
সেই চিত্র বদলে যাওয়ার কথা তুলে ধরে ইউসুফ আলী বলেন, এক আমলে এই এলাকার এমপি ছিল দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তারা ভোলাব ইউনিয়নের মানুষের জন্য কোনো উপকারে আসে নাই। তবে গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি হওয়ার পর এলাকার অবস্থা পাল্টে গেছে। উনার আমলে রাস্তাঘাট এত বেশি পাকা হয়েছে যে এখন আর আমাদের কোথাও যাওয়া-আসা নিয়ে কষ্ট করতে হয় না। শুধু রূপগঞ্জ না, ঢাকা-নরসিংদীও আমরা এখন খুব দ্রুত যেতে পারি।
আতলাপুর বাজারের দিক ধরে কিছুটা এগুতেই কথা হয় একজন চা বিক্রেতার সঙ্গে। এলাকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে রাস্তাঘাট বা শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কিছু চাইতে হয় নাই। সবকিছুই ভালোভাবে হচ্ছে। অল্প একটু রাস্তার কাজ বাকি আছে আতলাপুর বাজারে একটা অংশে। কিন্তু সেখানেও এই কয়েকদিনে ঢালাই শুরু হয়ে গেছে। আগে যেখানে আমরা যাতায়াত ও মালামাল আনার জন্য পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলাম নৌকা বা লঞ্চের ওপর, সেইটা এখন অনেকটাই পালটেছে।
এই চা বিক্রেতা বলেন, রূপগঞ্জে একসময় অনেক বড় বড় এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন আমাদের এলাকা থেকে। কিন্তু ভোলাব ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কোনো কাজ করেন নাই। তবে গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে রাস্তাঘাট পাকা হইছে অনেক। এখন আমাদের এলাকার লোকেরা চাইলেই নরসিংদী, রূপগঞ্জ, ঢাকায় গিয়ে চাকরি করতে পারে। সকালে গিয়ে অফিস করে বাড়ি ফিরে আসে সন্ধ্যায়। যেহেতু রাস্তাঘাট পাকা হয়ে গেছে, আশা করছি আমাদের এলাকায় কাজের সুযোগও বাড়বে।
আরেকটু এগুতেই কাঁচাবাজার বিক্রেতা হুমায়ুন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আগে আমাদের সবজি আনতে রূপগঞ্জ বা ঢাকা যেতে হতো। কারণ সবজি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কেউ বাইরে থেকে আমাদের এখানে আসতে পারত না। বলা যায় রাস্তাঘাটের জন্য আসতেই চাইত না। এখন রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় আমাদের আর যেতে হয় না। বড় বড় কোম্পানির লোকজনই এখন এখানে পণ্য বিক্রি করতে আসে। আমার কাঁচাবাজারের জন্যও এখন আর কোথাও যেতে হয় না। পিকআপ ভ্যান বা নদীতে ট্রলারে করেই চলে আসে সবকিছু।
হুমায়ুন মিয়া বলেন, একটা সময় এদিকে উন্নয়ন বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাটের জন্য কেউ পাকা বাড়ি করার সাহস করত না। গাজী সাহেব এমপি হওয়ার পর রাস্তাঘাট পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে জীবনধারাও পাল্টে গেছে। এখন চাইলেই এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা রূপগঞ্জ বা ঢাকা যেতে পারে পড়ালেখার জন্য। ভোলাব ইউনিয়নে কখনো এত পাকা রাস্তা হবে বা এত উন্নয়ন হবে, আমরা স্বপ্নেও ভাবি নাই। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি হওয়ার পরে সেগুলো করে আমাদের আশাবাদী করে তুলেছেন। আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও আরও উন্নয়ন দেখতে পারব।
আতলাপুর বাজারের পথ ধরে আরেকটু সামনে পিকআপচালক সুরুজ আলী সারাবাংলাকে বলেন, বছরখানেক আগেও আতলাপুর বাজারে আসার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। এই বাজারের সবাই গাজীপুর বা গাউসিয়া থেকে চিপস ও অন্যান্য আইটেম নিজেরা গিয়ে আনত। ট্রলারে করেও আনত অনেকে। আর এখন সপ্তাহে শুধু আমাদের কোম্পানিরই দুইটা করে পিকআপ এখানে মালামাল নিয়ে আসে। প্রায় তিন লাখ টাকার চিপস এখানের দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হয়, যা আগে ছিল শূন্যের কোটায়।
সুরুজ আলী আরও বলেন, রাস্তাঘাট ভালো হয়ে গেলে তো আসলে মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা। তখন সব বড় কোম্পানি নিজেদের মাল গাড়ি দিয়েই পাঠিয়ে দেয় বড় বড় বাজারে। আগে রাস্তাঘাট না থাকায় সেইটা হতো না এই বাজারে। এখন পরিস্থিতি পালটেছে। আর তাই ব্যবসাও বেড়েছে।
আতলাপুর বাজার পাড় করে নদীর পাশ দিয়েই রাস্তা চলে গেছে কাঞ্চন পৌরসভার দিকে। এই পথেই দেখা গেল বড় বড় ট্রাকে মালামাল নেওয়া হচ্ছে আতলাপুর বাজারে।
এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা থেকে কাছাকাছি হলেও রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়ন ছিল একসময় অত্যন্ত অবহেলিত একটি এলাকা। কিন্তু এখন সেখানে কেউ গেলে বিশ্বাস করতে পারবে না আগের পরিস্থিতি। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশনায় রূপগঞ্জের অন্যান্য এলাকার মতো ভোলাব ইউনিয়নের রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনেক কাজ করা হয়েছে। এখন আর ভোলাব ইউনিয়নকে কেউ পিছিয়ে থাকা এলাকা বলতে পারবে না।
প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলছে তার বড় উদাহরণ এই রূপগঞ্জ। আর রূপগঞ্জে সব উন্নয়ন প্রকল্প সংসদ সদস্য হিসেবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজেই তদারকি করেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় এসে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় রূপগঞ্জের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। আশা করছি সেগুলোও খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলতে পারব।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জ-১ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ভোলাব ইউনিয়ন রূপগঞ্জ