এক মণ ধানে ভরা মৌসুমেও মিলছে না ১ কেজি ইলিশ
২২ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৯
বরিশাল: ইলিশের ভরা মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। এসময়েও বাজারে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ইলিশপ্রেমীরা। ইলিশের দাম এতোটাই বেশি যে সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। এক মণ ধান বিক্রি করে মিলছে না এক কেজি ইলিশ। সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের দাম দেখে বাজার থেকে খালি হাতে চলে যাচ্ছেন।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেকটা চড়া। গত কয়েকদিন আগে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। বর্তমানে জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। তবে শিগগিরই নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে বলে প্রত্যাশা মৎস্য বিভাগের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। মাঝেমধ্যে দুই-একটি ট্রলার অল্প কিছু মাছ পেলেও বেশিরভাগ ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরছে ইলিশশূন্য হয়ে।
বরিশালের সবচেয়ে বড় মোকাম পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ বিক্রেতারা জানান, গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ইলিশের দাম বেড়েছে, আর কমেছে সরবরাহ। বর্তমানে ৬০০-৯০০ গ্রাম সাইজের ১ কেজি ইলিশ ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ১৮৫০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় হা-হুতাশ ক্রেতাদের। তারা বলছেন, গত মৌসুমে খুচরা বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যেত ৮০০-৯০০ টাকায়, সেই মাছ এবার ১ হাজার ২০০ টাকায়ও মিলছে না। পোর্ট রোডের আড়তেই তা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম আরও বেশি।
সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে পোর্ট রোডের আড়তের পাশের খুচরা বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন বেল্লাল হোসেন। তবে দরদাম করে ফিরে যান তিনি। এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম বিক্রেতা তার কাছে ১ হাজার ৪০০ টাকা চান। এরপর খানিকটা সরে গিয়ে স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ‘দাম বেশি, আরেকদিন কিনবো।’
নগরীর নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ‘ইলিশ মাছের দামে আগুন। হাজার টাকার ওপর কেজি চায়। আমাদের মতো মানুষের কি এই দামে ইলিশ কেনা সম্ভব? ইলিশ মাছ বড় লোকের খাবার। গরিবের কপালে এখন আর ইলিশ নেই।’
আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি সাগরদী থেকে পোর্ট রোডে এসেছি ইলিশ কিনতে। বাজারে এসে ইলিশের যে দাম তাতে কেনা মুশকিল। তাই না কিনে বাসায় চলে যাচ্ছি। ভরা মৌসুমেও ইলিশের যে দাম তা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে।’
আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার নামে আরেকজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান বাজারে এক মণ ধান বিক্রয় হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। আর এক কেজি ইলিশের মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। এই ভরা মৌসুমেও এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি ইলিশ মাছ কেনা যায় না। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা খাবে কিভাবে। অস্বাভাবিক চড়া দামের কারণে কত দিন যে ইলিশ খাইনি!’
ইলিশ বিক্রেতাদের দাবি, নদ-নদীতে তুলনামূলকভাবে ইলিশ না পাওয়ার সঙ্গে জেলেদের মাছ ধরার খরচ ও চাহিদা বাড়ায় ইলিশের দাম বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানান, আগের মতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি খরচ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইলিশের দাম বাড়ছে। তবে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টি হলে জেলেদের জালে বেশি ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন দাম কমতে পারে।
পোর্ট রোডের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে ইলিশ নিয়ে সিন্ডিকেট হয়। যে কারণে বড় বড় জেলে নৌকা আর ট্রলার এখন বরিশালমুখি হতে চাচ্ছে না।’
বরিশাল মৎস্য অধিদফতরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, জুলাই-আগস্ট বর্ষার চিরচেনা এই দুই মাস সাগরের ইলিশের ভরা মৌসুম। নদ-নদীতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। সাগর মোহনায় নদীর মুখ চর পড়ে পানির গভীরতা কমে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও মাঝে মাঝে নদীতে ইলিশ আসে না।
মৎস্য আড়তদার বলছেন, এবারের জাটকা মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ জাটকা ধরেছে অসাধু জেলেরা। এ কারণে এবার ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে হলে জাটকা ধরা বন্ধ করতে হবে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এবার গতবারের চেয়ে বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। তাই ধরাও পড়বে প্রচুর। বাজারে এখন ইলিশের সংকট থাকলেও অচিরেই তা কেটে যাবে। বৃষ্টি কম হওয়ায় কম ইলিশ ধরা পড়ছে। বৃষ্টি বাড়লে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও