চট্টগ্রাম ব্যুরো: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি তথ্যে চলতি বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে।
মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার রাতে এমদাদুল হোসাইন (৩১) নামে পুলিশের এক কনস্টেবল মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে রেখার-২ এ কর্মরত ছিলেন। একইদিন রাতে তৃষ্ণা রাণী রয় নামে আরও এক নারী মারা গেছেন।
এমদাদুল হকের স্ত্রী শারমিন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ডিউটিরত অবস্থায় আমার স্বামীর জ্বর উঠে। শুক্রবার দামপাড়া পুলিশ লেইনে ডাক্তার দেখায় সে। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে তাকে রেস্ট নিতে বলে। পরে ডেঙ্গু টেস্টে পজিটিভ আসলে এভারকেয়ারে ভর্তি করায়। সেখানেই তিনি মারা যান। আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। তাদের নিয়ে কি করব এখন?’
তৃষ্ণা রাণী রয়ের ছেলে রুদ্র রয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার (১৮ আগস্ট) মায়ের জ্বর আসে। পরে তার শরীর দুর্বল হয়ে আসে। খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এরপর দিন মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে আনি। রোববার রিপোর্ট নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান। রক্তবমি শুরু হয়ে যায়।’
‘গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত মাকে আর বাঁচাতে পারিনি।’
প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ জন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৩৬ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৪ জন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেজ হাসপাতালে এবং ৬ জন চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আক্রান্ত আরও ৮১ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর চট্টগ্রামে মোট ৪ হাজার ৮৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৮৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ৪ হাজার ৫৮৩ ভজন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
চলতি আগস্ট মাসে ২ হাজার ৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩১১ জন। এছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুনে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
চলতি বছর মারা যাওয়া ৪৮ জনের মধ্যে শিশু-কিশোর মিলিয়ে ১৮ জন, ১২ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী আছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩ জন, জুনে ৬ জন, জুলাইয়ে ১৬ জন এবং আগস্টে ২১ দিনে ২৩ জন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে চট্টগ্রামে ১৭ জন, ২০২১ সালে ২৭১ জন এবং ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২১ সালে ৫ জন মারা গিয়েছিল।