সাঈদীর মৃত্যুতে শোকের নিন্দা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির
২৩ আগস্ট ২০২৩ ২৩:০৫
ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্য কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোকের নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বুধবার (২৩ আগস্ট) এক বিবৃতিতে কমিটি এ নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মৌলবাদী ধর্ষক দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন নিম্ন আদালতের বিচারকের সাঈদীপ্রীতি আমাদের অত্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।
‘আমরা গণমাধ্যমসূত্রে জেনেছি, বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগের প্রায় দেড় শ স্থানীয় নেতাকর্মী সাঈদীর বন্দনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকবার্তা প্রচার করেছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশংসনীয় হলেও ছাত্রলীগে জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ ও অবস্থানে আমরা উদ্বিগ্ন। বিএনপির নেতা ও সমর্থকরা ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর জন্য শোক প্রকাশ করবেন, এটা স্বাভাবিক। কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত হচ্ছে বিএনপির সহোদর। কিন্তু আওয়ামী লীগের কারও জামায়াতপ্রেম নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়,’- বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
এতে আরও বলা হয়, জামালপুরের সরিষাবাড়ির এক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোকসভা অনুষ্ঠানের সময় ওই স্কুলের ধর্মবিষয়ক শিক্ষক আকস্মিকভাবে খুনি-ধর্ষক সাঈদীর জন্য প্রার্থনা করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকও অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনিও এই ঘৃণ্য অপরাধীদের দলভুক্ত।
রাজশাহীর একজন পুলিশ পরিদর্শকের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর প্রশংসায় বক্তব্য দেয়ার পর তাকে বান্দরবন বদলি করা হয়েছে, যা আমরা যথেষ্ট শাস্তি বলে মনে করি না। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাকে চাকরিচ্যুত এবং ফৌজদারি অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করাই হচ্ছে আইনের শাসনের দাবি। আরও বেশি শঙ্কিত হয়েছি যখন আমরা জেনেছি যে পঞ্চগড় জেলায় কর্মরত অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক হাকিম মিলটন হোসেন সেই খুনি-ধর্ষকের প্রশংসা করে বার্তা দিয়েছেন, যাকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জঘন্যতম অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। যে অপরাধীকে সর্বোচ্চ আদালত সাজা দিলেন, একজন নিম্ন আদালতের বিচারক কীভাবে তার প্রশংসা করতে পারেন, তা আমরা বুঝতে অক্ষম। আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যক্তি বিচারকের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না?
নির্মূল কমিটি দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি যিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার কাছে আমাদের অনুরোধ, এসব অভিযোগ তদন্ত করে সেই বিচারক এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় অগ্রাহ্যকারী অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
বিবৃতিতে সই করেছেন বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, জননেতা ঊষাতন তালুকদার, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, সমাজকর্মী শফিকুর রহমান শহীদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
বিবৃতিতে আরও সই করেছেন সংগীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহিদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহিদসন্তান শমী কায়সার, শহিদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহিদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, লেখক-কলামিস্ট মিথুশিলাক মুর্মু, কলামিস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লীনা পারভীন, মানবাধিকারকর্মী রহমান খলিলুর, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সাংবাদিক দিলীপ মজুমদার, সমাজকর্মী রাশেদুল ইসলাম, সমাজকর্মী ইস্রাফিল খান বাপ্পি, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সমাজকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাঈদীর জন্য শোক