ডিএনসিসির ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মেয়রের কাছে নালিশ
২৪ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৭
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এডিস মশা নিধন অভিযানে মেজিস্ট্রেট সারাওয়াত মেহজাবীনের অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যবহার, হয়রানির অভিযোগে মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে লিখিত নালিশ করেছেন এমদাদুল হক এক ভুক্তভোগী।এমদাদুল হক, চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ব্লক-সি এর বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত ২১ আগস্ট একজন ম্যাজিস্ট্রেট (সারাওয়াত মেহজাবীন) এসে আমাকে নিচে ডেকে নেন। আমি নেমে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বলেন আপনার এখানে লার্ভা পাওয়া গেছে, আপনি স্বীকার করুন আপনি দোষী। আমি বলতে শুরু করি, দেখুন আমি কদিন আগেই হজ্ব থেকে এসেছি, এখনো অনেক অসুস্থ, আপনার কি অভিযোগ আমি বিস্তারিত জানি না। এটুকু বলতেই ম্যাজিস্ট্রেট তেলে বেগুনে তেঁতে উঠেন, বকাবকি করেন, বলেন এই সব কথা অসঙ্গতিপূর্ণ এবং জোরপূর্বক আমাকে তার আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিতে বলেন।
এই কথা বলার পর, আমি বলি, যদি কথা বলার সুযোগ না দেন তাহলে আপনি যা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। এতে তিনি আরো রেগে গিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় (অসভ্য, বেয়াদব ইত্যাদি) বলে বকাবকি করেন।
অভিযোগে এমদাদ আরও লেখেন, তার বয়স প্রায় ৭০ বছর এবং ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। চন্দ্রিমাতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করায় সমাজে বেশ জনপ্রিয় এবং সম্মানিত। এহেন অসম্মানজনক কর্মকাণ্ডে আমি অসুস্থ (কাঁপুনি) বোধ করি এবং আমাকে বাসার অন্যান্য সবাই ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আমার বাসার দারোয়ানকে নিয়ে যায় এবং তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে বলে। তাকে ছাড়ার জন্য আমার স্ত্রী এবং ব্যাবসায়িক সহযোগী বিপুল স্থানীয় ৩৩ নং ওয়ার্ড কমিশনারের অফিসে গেলে তাদেরকেও সেখানে আটকাদেশ দেওয়া হয় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক হাতকড়া পরানো হয়। কেরানীগঞ্জে জেলে পাঠানোর কথা বলে জোরপূর্বক তিন লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয় এবং কাগজে তাদের নাম ও বিস্তারিত নেয়া হয়। এক পর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ অফিসার বিপুল সাহেবের বাবা-মা সহ পরিবার নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। পরবর্তীতে আমরা তিন লাখ টাকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনি।
একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হিসাবে আমি আর্থিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, ওই সময়ে বেশ কয়েজন প্রতিবেশী এবং ওয়ার্কার উপস্থিত ছিলেন এবং প্রয়োজনে তারা সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত।
আরও উল্লেখ্য যে, ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ২৯১ ধারা এবং ধারা ২৬৯ উল্লেখ রে বলেন, যে দুটি ধারায় জরিমানা দেওয়া হয়েছে তার কোনটিই আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। জরিমানা আদায় করা হয়েছে যা আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। অবহেলামূলক কাজ যার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার করার আশংকা রয়েছে, উক্ত ধারার আলোকে আমার অধীনস্থ আঙ্গিনায় এই ধরণের কোন রোগ সংক্রমণের কোন আশংকা/পরিবেশ নেই। আদায়কৃত জরিমানা আমার আইনি অধিকার ক্ষুণ্নের শামিল। তারপরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তিন লাখ টাকা দেনা গ্রহনপূর্বক পরিশোধ করেছি (রশিদ নং ৫৮২৬৩৩)।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে ম্যাজিস্ট্রেট (সারাওয়াত মেহজাবীন) যে ধরনের আচরণ করেছেন, ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা দেশের কোনো নাগরিকেরই প্রাপ্য নয়। আইনের প্রয়োগ এবং আইনের ও ক্ষমতার অপব্যবহার দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আমি মনে করি ম্যাজিস্ট্রেট সারাওয়াত মেহজাবীন তার হাতে অর্পিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের হয়রানি করেছেন। আমি এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি। এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষ্য রয়েছে, প্রয়োজনে তা আপনাদের সামনে পেশ করা হবে।
আমি মনে করি, আমাকে যে জরিমানা করা হয়েছে তা আমার প্রাপ্য নয়, কারণ ঘটনাস্থলে কোনো লাভার অস্তিত্ব ছিলো না। মেয়রের কাছে উক্ত জরিমানা প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনে স্বাধীন। একজন নাগরিক সিটি করপোরেশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইতে পারি কী হয়েছে। কিন্তু বিচারিক আদেশের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্তব্যের সুযোগ নাই।
সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ