নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ ৬ প্রস্তাব ড. কামালের
২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩০
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সভায় ড. কামাল হোসেন জানান, রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিরসনে এই সমঝোতার ডাক। সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান, একইসঙ্গে জাতীয় ঐক্যের ডাকও দেন তিনি।
বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন জাতির সামনে একটি উত্তরণের উপায় হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে গণফোরাম বিশ্বাস করে। পথ ও মত হিসেবে গণতন্ত্রই আমাদের শেষ কথা, যেখানে ‘সকল ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ’। যেখানে অস্ত্র, অর্থ ও পেশিশক্তি নির্ভর রুম রাজনীতির বিপরীতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটবে, যেখানে নেতিবাচক রাজনীতির পরিবর্তে ইতিবাচক, সৃজনশীল ও জাতীয় সমঝোতার রাজনীতি নিশ্চিত হবে। আমরা সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা এমন জাতীয় সংসদ চাই, যা জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে, এমন নির্বাহী বিভাগ চাই যারা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে, এমন বিচার বিভাগ চাই যারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।”
জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত সরকার দরকার উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের জাতি ও রাষ্ট্র এখন একটি সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, ধন-বৈষম্য, কালো টাকা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা ইত্যাদি প্রশ্নে কোনো সমাধান আজও হয়নি। বরং গণতন্ত্রহীনতা, কর্তৃত্ববাদ, অবাধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট, কালো আইন জারি ইত্যাদির ফলে সর্বত্র একটা ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-তেল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবনের সবকিছুতেই বিরূপ প্রভাব পড়েছে।’
‘একদিকে জাতীয় সংসদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অপারগ, নির্বাহী বিভাগকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অক্ষমতা, সর্বোপরি বিচারাঙ্গনে আইনের ধারকরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপমানিত হওয়া এবং জবরদস্তিমূলক সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন পরিচালনা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কলঙ্কের বিষয়। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত, জনগণ অপশাসনের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ নিষ্পেষিত। আজ জনগণের ঐক্যের খুবই প্রয়োজন’, বলেন প্রবীণ এই নেতা।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব সমস্যা ছাপিয়ে জাতির জন্য আজ সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর উপর সরকারের সীমাহীন দমন পীড়নের ফলে দেশ আজ চরম সংকটে পতিত হয়েছে। ফলে বিদেশি রাষ্ট্রগুলি আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে। এ অবস্থায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করা। এর জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী দল ও শক্তির সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং জাতীয় সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। গণফোরাম জনগণের মালিকানা ও জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। এ দেশ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, আপনার-আমার সবার।’
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার পর থেকে দেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের দিকে চলে গেছে। জনগণ হারিয়েছে ভোটাধিকার। এ জন্য দায়ী সামরিক সরকার, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ।’
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সভাপতি সাবেক এমপি মফিজুল ইসলাম খান, আ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান, মেজবাউদ্দিন ও মোস্তাক আহমেদসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গণসংগীত পরিবেশন করা হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও/টিআর