২৫ বছরেও শেষ হয়নি রানার সম্পাদক মুকুল হত্যার বিচার
৩০ আগস্ট ২০২৩ ০৮:১৬
যশোর: ২৫ বছরেও চিহ্নিত হয়নি যশোরের আলোচিত দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুলের হত্যাকারী। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে রিটের কারণে একযুগেরও বেশি সময় ধরেই মামলার বিচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। আর উচ্চ আদালতে রিটের নিষ্পত্তি না হলে নিম্ন আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মুকুলের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মুকুলের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসায় যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পর দিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অজ্ঞাত আসামিদের নামে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তী সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেকমন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এক পর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। আর এ কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।
এর পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ওই সময় মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। গত ১৩ বছর ধরে মামলাটির কার্যক্রম ওই অবস্থায় রয়েছে। পরে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে ফের বিচার কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে জানান, মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে মামলাটির আর্গুমেন্ট শুরু করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টে আবেদনের নিষ্পত্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আড়াই দশকেও মুকুল হত্যার বিচার না হওয়া কষ্টের। এতে হত্যাকারীরা উৎসাহিত হবে। সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে পড়বে। তাই আমি আশা করব সরকার মুকুল হত্যার সঠিক বিচারকাজ দ্রুত শুরু করবেন।’
এদিকে, শহিদ সাংবাদিক সাইফুল আলমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে শোকর্যালি, শহিদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।
সারাবাংলা/টিএম/পিটিএম
২৫ বছর আর এম সাইফুল আলম মুকুল রানার পত্রিকা সম্পাদক হত্যার বিচার