Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাদ পড়াদের’ ফিরিয়ে এনে হেফাজতের কমিটি, ফিরছেন মামুনুলও

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ আগস্ট ২০২৩ ২২:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যু এবং অধিকাংশ শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর চুপসে যাওয়া কওমি মাদরাসাভিত্তিক ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়েছে।

নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন প্রয়াত আহমদ শফীর সন্তানও। এ ছাড়া সংঘাত, মামলা-গ্রেফতার পরিস্থিতিতে বাদ যাওয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতাও কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। মামুনুল হকসহ যারা কারাবন্দি আছেন, মুক্ত হলে তাদেরও পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদরাসায় হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী নতুন এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন।

নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ২০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন হয়েছে।

২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবরোধ কর্মসূচিতে তাণ্ডব চালিয়ে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। এর পর ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে সহিংস আন্দোলনে নেমেও আলোচনায় আসে সংগঠনটি। যদিও ওই সময় তারা সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড়ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এরপর মামলা-গ্রেফতারে দুই বছরেরও বেশিসময় ধরে কার্যত ‘নিষ্প্রাণ’ ছিল সংঠনটি।

নতুন কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে সুলতান যওক নদভীকে। আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও সিনিয়র নায়েবে আমির খলিল আহমদ কাসেমী ও আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর।

নতুন কমিটিতে নায়েবে আমির করা হয়েছে ৪৫ জনকে। এতে প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে ইউসুফ মাদানী পদ পেয়েছেন, যদিও তাঁর মৃত্যুর পর সন্তানদের এতদিন দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। মহাসচিব পদে আছেন সাজিদুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে আছেন জুনায়েদ আল হাবীব। ১০ জন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হারুণ ইজাহারও আছেন। গত কমিটিতে এ তিনজন বিভিন্ন পদে ছিলেন। কিন্তু সংঘাতের পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাদের কমিটি থেকেও বাদ দেয়া হয়েছিল। ইসলামাবাদী ও হারুণ ইজাহার নেজামে ইসলাম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

১৪ জনকে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মুফতি বশিরউল্লাহ। আটজনকে সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। অর্থ, প্রচার, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, দফতর, সমাজকল্যাণ, আইন, দাওয়াহ, তথ্য ও গবেষণা, ছাত্র ও যুবসহ সম্পাদকমণ্ডলীর বিভিন্ন পদে আরও ১১৭ জনের ঠাঁই হয়েছে।

বাদ পড়া নেতাদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো ধরনের বিরোধ আর নয়। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করব। সেভাবেই কমিটি হয়েছে।’

মামুনল হকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব আলেম-ওলামা এখনও কারাগারে আছেন, তারা কারামুক্ত হওয়ার পর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখন কমিটিতে নিলে সরকারের রোষানলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য টেকনিক্যালি আমরা বিষয়টি এড়িয়ে গেছি।’

আলাপে মীর ইদ্রিস জানিয়েছেন, সরকার বিরোধী অবস্থান কিংবা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হেফাজত জড়াবে না। সভায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

২০১০ সালে দেশের কওমি অঙ্গনের প্রবীণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়। আহমদ শফী আমির এবং জুনায়েদ বাবুনগরী প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৩ সালে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির নামে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল সংগঠনটি। পরবর্তী সময়ে নানা পটপরিক্রমায় শফী ও বাবুনগরীর অনুসারীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তবে শফী জীবিত থাকা অবস্থায় সংগঠন বিভক্ত হয়নি।

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসায় তিনদিন শফীকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্ররা। ওই সময় বিক্ষোভের মধ্যে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা শফী মারা যান। মৃত্যুর পর থেকে তারা অনুসারীরা তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন।

মূলত এর মধ্য দিয়ে দুইভাগে ভাগ হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। একভাগে শফীপন্থিরা, আরেকভাগে বাবুনগরীর অনুসারীরা। শফীর মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫১ সদস্যের হেফাজতের নতুন কমিটি হয়। এতে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করা হয়। বাদ দেওয়া হয় শফীপন্থিদের। কিছুদিনের মধ্যেই কাসেমীর মৃত্যু হলে সিনিয়র নায়েবে আমির নুরুল ইসলামকে মহাসচিব করা হয়। এই কমিটিতে থাকা হেফাজত নেতারা শুরু থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় সভায়, ওয়াজ মাহফিলে সরকার, মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগকে তীব্র আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে থাকেন। যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন।

এর মধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য আসে গণমাধ্যমে। দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় হতাহত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডবের পর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এক পর্যায়ে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে ৭ জুন বাবুনগরীকে আমির করে আবারও ৩৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ‘আগের তেজ হারিয়ে’ শুধু বাবুনগরীর নামে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড।

চারমাস পর ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট বাবুনগরীও মারা যান। এরপর হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটি ও শূরা কমিটির এক নম্বর সদস্য মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে আমির করা হয়। অশীতিপর বৃদ্ধ মুহিবুল্লাহও গত দুই বছর ধরে হেফাজতে ইসলামকে আর চাঙ্গা করতে পারেননি।

সারাবাংলা/আরডি/একে

কমিটি হেফাজতে ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর