Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাস্টমস গুদাম থেকে সোনা চুরি, চার কর্মকর্তাসহ আসামি ৮

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৭

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় যে মামলা হয়েছে। মামলায় চার কর্মকর্তাসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, মামলার এজাহারে থাকা নাম অনুযায়ী আসামিদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। চুরির রহস্য উদঘাটনে করণীয় সবকিছু করা হবে।

বিমানবন্দরের ভেতরের ওই গুদামের দায়িত্ব পালন করেন চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহী। তাদের মধ্যে চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তারা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। অন্য চারজন সিপাহি হলেন রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এই চুরির রহস্য উদ্‌ঘাটনে গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্যসামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা বলে জানান।

মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান।

আরও পড়ুন: ১৫ নয়, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা উধাও

বিজ্ঞাপন

মামলায় আরও বলা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তারা গিয়ে গুদামের একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা দেখেন। গুদামের পূর্ব পাশে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাতাস যে অংশ দিয়ে বের হয়, সেখানকার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। পরে তারা গুদামের দায়িত্বে থাকা চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন।

পরে গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তারা আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আটককৃত ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছে।

এ ঘটনায় রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে আটজনকে আসামি করে মামলা করেন ঢাকা কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন। মামলায় চুরি হওয়া সোনার মুল্য দেখানো হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

বিমানবন্দরে কাস্টমসের ওই সংরক্ষিত গুদাম থেকে সোনা চুরির একটি খবর জানাজানি হয় গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে। ওই সময় জানা যায়, গুদামের একটি আলমারি ভেঙে একটি বাক্স চুরি করা হয়েছে। ওই বাক্সে ছিল ১৫ কেজি সোনা, বর্তমান বাজারদরে যার দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটেই প্রথম খবর প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, কেপিআইভুক্ত ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকা ওই গুদাম থেকে সোনা চুরির ঘটনাটি কয়েকদিন আগে থেকেই অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার তাদের বিমানবন্দরের গুদামে রক্ষিত সোনার হিসাব জানাতে নির্দেশ দেন। শনিবার সকাল থেকে রোববার রাত পর্যন্ত হিসাবে বেরিয়ে আসে— ১৫ কেজি নয়, ‍গুদাম থেকে উধাও হয়েছে ৫৫ কেজি ৫১০ গ্রাম সোনা।

এ নিয়ে কাস্টমস বা বিমানবন্দরে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার কেউ মুখ খোলেননি। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদামের দায়িত্বে থাকেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের দুজন। দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের ওই ভল্টের দায়িত্বে ছিলেন একই পদধারী দুই কর্মকর্তা শহিদুল ও সাহেদ। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ আদেশে তাদের দুজনকে বদলি করে একই পদমর্যাদার আকরাম ও মাসুমকে দেওয়া হয় দায়িত্ব।

সূত্রগুলো বলছে, শহিদুল ও সাহেদ গুদামে সংরক্ষিত সামগ্রীর হিসাব নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত আকরাম ও মাসুমকে বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করেন। এক পর্যায়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার লুবানা ইয়াসমিন গত ২১ আগস্ট শহিদুল ও সাহেদের বদলির আদেশ গুদামের মূল্যবান সামগ্রী বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

কাস্টমস গুদাম সোনা চুরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর