হিজাব ইস্যুতে ‘অপপ্রচার’, ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫০
ঢাকা: হিজাব ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদেরর (আইইআর) শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে অনুষদটির শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড. অহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষকের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হয়েছে। সেজন্য উপাচার্যের কাছে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেন তারা।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)-সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান একাডেমিক কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষকের নামে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে, গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশব্যাপী মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আইইআর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষকদের সামনে নেকাব না খোলায় ভাইভা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী। সেসময় অন্য আরেক শিক্ষার্থীকে জোর করে নেকাব খুলে ভাইভা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠে। ঘটনার সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে অনুষদটির শিক্ষক অধ্যাপক ড. অহিদুজ্জামানকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে— এমন দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
সেদিনকার ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ইনস্টিটিউটের ৩য় বর্ষের (২৬ তম ব্যাচের) মৌখিক পরীক্ষা ৩১ জুলাই ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। ওই তারিখে একটি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানসহ মোট তিন জন শিক্ষক ১৫ জন শিক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেন। যেখানে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে দুই ক্রেডিট কোর্সের সমতূল্য নম্বর দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইআরের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সেখানে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ওই বোর্ডে ‘বিশেষ শিক্ষা’ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভাইভায় অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, পরীক্ষায় যেকোনো শিক্ষার্থীকে শনাক্তকরণ শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভাইভা বোর্ডে শিক্ষার্থীর মুখমণ্ডল অনাবৃত করতে বলা হয়। এখানে শিক্ষকরা বিষয়টি সম্পূর্ণ একাডেমিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে নিয়ম অনুযায়ী করেছিলেন।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওই ভাইভার প্রায় একমাস পর গত ২৭ আগস্ট অনলাইন গণমাধ্যমে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব প্লাটফর্মে বিশেষ করে অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানসহ আইইআরের অন্যান্য শিক্ষক সম্পর্কে নানা কটূক্তি, ট্রল, ও মিথ্যাচার করা হয়। যা সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ওইদিন সকলের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও তার ভাইভা নেওয়া হয়নি বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা হয়নি এবং ওই ছাত্রী সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত থাকায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য মুখের কাপড়টি সরাতে বলা হয়েছিল। পিতৃতূল্য ও মাতৃতূল্য শিক্ষকরা বুঝিয়ে বলার পর সে সেটি করেছিল। ওই ভাইভা বোর্ডে পোশাক পরিচ্ছদ ও পর্দা নিয়ে কোনো ধরনের কথা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেন। স্মারকলিপিতে লিখিত ওই ছয়টি প্রস্তাবের আলোকে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানান তারা।
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম