৫৫ কেজি সোনা চুরি: ঢাকা কাস্টমসের তদন্ত কমিটি
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৫৯
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংরক্ষিত গুদাম থেকে ৫৫ কেজি ৫১০ গ্রাম সোনার বার ও অলংকার চুরির ঘটনায় ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদের সই করা চিঠিতে এই কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দিন। কমিটিকে প্রয়োজনে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় এরই মধ্যে মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আমরাও কমিটি গঠন করেছি। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। এখানে যেই জড়িত থাকুক, তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছি।’
কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা যায়, সোনা চুরির ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে ঘটনা তদন্তে গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার। পরদিন সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) মিনহাজ উদ্দিনকে বাদ দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দিনকে প্রধান করে ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়।
আরও পড়ুন- কাস্টমের ভল্টের ৫৫ কেজি সোনা চুরি: মামলার প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর
৯ সদস্যের কমিটিতে সদস্য করা হয় যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান, ডেপুটি কমিশনার সমরজিৎ দাস ও জেবুন্নেছা; রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সামসাদ হোসেন; এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আব্দুল্লাহ ও মো. জাহিদুল ইসলামকে।
একদিন না যেতেই ফের মিনহাজ উদ্দিনসহ আরও দুজনকে যুক্ত করে কমিটি ১২ সদস্যের করা হয়েছে। মিনহাজ উদ্দিন ছাড়া নতুন করে যুক্ত হওয়া দুজন হলেন উপকমিশনার লুবানা ইয়াসমিন ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নেপাল চন্দ্র ধর।
তদন্ত কমিটিকে গুদামে সংরক্ষিত মালামালের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি (হিসাব মেলানো) করতে বলা হয়েছে। ইনভেন্ট্রিতে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ৫৫ কেজি ৫১০ গ্রাম সোনা ও সোনার অলংকার উধাওয়ের হিসাবের সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ঘটনায়র বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতেও বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতেও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ১৫ নয়, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা উধাও
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গুদাম ব্যবস্থাপনা সুচারু করার জন্য কী ধরনের কাঠামো প্রয়োজন, তদন্ত কমিটি যেন সেটিও চিহ্নিত করে জানায়। তদন্ত করতে গিয়ে অন্য যেকোনো পরামর্শ জানানো প্রয়োজন মনে করলেও সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে পারবে তদন্ত কমিটি।
এদিকে সোনা ও সোনার অলংকার চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ঘটনায় রোববার দিবাগত রাতে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের গুদামে থাকা ৫৫ কেজি সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিমানবন্দরে কাস্টমসের ওই সংরক্ষিত গুদাম থেকে সোনা চুরির একটি খবর জানাজানি হয় গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে। ওই সময় জানা যায়, গুদামের একটি আলমারি ভেঙে একটি বাক্স চুরি করা হয়েছে। ওই বাক্সে ছিল ১৫ কেজি সোনা, বর্তমান বাজারদরে যার দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটেই প্রথম খবর প্রকাশিত হয়।
সারাবাংলার অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ কর্মকর্তাদের জানান, শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থিত তাদের সংরক্ষিত গুদামে থাকা সব সোনার অলংকার ও সোনার বারের হিসাব করা হবে। এরপর শনিবার সকালের দিকে জানাজানি হয়, কাস্টমসের সংরক্ষিত গুদাম থেকে সোনা উধাও হয়েছে। গুদামের স্টিলের আলমারিটিও ভাঙা ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, ওই আলমারি ভেঙেই ১৫ কেজি সোনা চুরি করা হয়েছে।
এ খবর অভ্যন্তরীণভাবে জানাজানি হলে কাস্টমস কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন এবং তদন্তে নামেন। পরে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার গুদামে থাকা সব সোনার অলংকার ও সোনার বারের হিসাব চান। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে করা হিসাব শেষে কাস্টমস জানতে পারে, গুদাম থেকে গায়েব হওয়া সোনার পরিমাণ প্রথমে জানাজানি হওয়া পরিমাণের প্রায় চার গুণ। সুনির্দিষ্টভাবে এর পরিমাণ ৫৫ কেজি ৫১০ গ্রাম। বাজারদরে হিসাব করলে চুরি যাওয়া এই সোনার দাম অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি।
আরও পড়ুন-
বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে ১৫ কেজি সোনা চুরি
বিমানবন্দর থেকে কাস্টমসের সোনা উধাও: অবশেষে মামলা
কাস্টমস গুদাম থেকে সোনা চুরি, চার কর্মকর্তাসহ আসামি ৮
সারাবাংলা/এসজে/টিআর