আশ্রয়ণ প্রকল্পে নানা অনিয়ম, নিম্নমানের ঘরে ধরেছে ফাটল
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৫
মঠবাড়িয়া থেকে ফিরে: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে হতদরিদ্র গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছে, ফলে বেশ কিছু ঘরে ফাটল ধরেছে। ইতিমধ্যে ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেকেই ঘরে বসবাস করতে চাচ্ছে না। এছাড়া প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর এক নামে বরাদ্দ নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভেঙে পড়ার ভয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা গুইলশাখালী ইউনিয়নের হোতখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে মৃত আবদুল কাদের মুন্সির ছেলে সেকান্দার মুন্সি ঘরে উঠতে পারেনি। এছাড়া খেতাচিরা প্রকল্পের ৪/৫টি ঘর বিক্রি করা হয়েছে। চেরাগগাছিয়া প্রকল্পের ২০ নম্বর ঘরটিও ঝালকাঠির একজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সেকান্দার মুন্সি বলেন, ‘বসতঘর না থাকায় স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে নিয়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করি। পত্রিকা বিক্রির কাজ করি, সেই সুবাদে সাংবাদিকদের সুপারিশে প্রায় ২ বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পাই। কিন্তু ঘর নির্মাণের কিছুদিন পরই ঘরে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরে উঠতে পারিনি। বাসা ভাড়া দিতে গিয়ে প্রায় সময়ই অর্ধহারে থাকতে হয়।’
সেকান্দার মুন্সির মেয়ে লিলি বেগম বলেন, ‘ঘর নির্মাণের সময় আমি তদারকিতে ছিলাম। নিজস্ব ঘর মজবুত করার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে ইট ও সিমেন্টও কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার এরপরও মানহীন মসলা ব্যবহার করেছে। বিষয়টি শুরু থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে নির্মাণের কিছুদিন পরই ঘরের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরে উঠতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা এমনকি সাংবাদিকরাও ঘরটি মেরামতের জন্য পিআইওকে একাধিক বার বললেও তিনি মেরামতের উদ্যোগ নেননি। আমারা মানবেতর জীবন-যাপন করছি।’
গতকাল শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেকান্দার মুন্সির জন্য নির্মিত ঘরটির সামনের বারান্দার পিলার মাঝখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরের সামনের অংশের দেয়ালেও আধ ইঞ্চি থেকে দুই ইঞ্চি ফাটল রয়েছে। এর ফাঁকা অংশ দিয়ে ঘরের ভেতর পর্যন্ত দেখা যায়। একই দেয়ালের উপরের অংশে অনেকখানি জায়গা নিয়ে ফাটল দেখা গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ঘরের সামনের দেয়ালটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিকের আমলে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। অপরদিকে প্রকল্পে গাছের সঙ্গে তালা লাগানো টিউবয়েলটিও চুরি হয়ে গেছে।
অন্যদিকে মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর নির্মাণেও কাজেও দুর্নীতির অভিযোগ যাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্মাণের ক্ষেত্রে ইট-বালু সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারা আশ্রয়ণ প্রকল্প সঠিক ভাবে নির্মাণ এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘আমি নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অল্প কয়েকমাস আগে এসেছি। বিগত সময় যিনি (ঊর্মি ভৌমিক) দায়িত্বে ছিলেন তার আমলেই আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো অনিয়মের খবর আসে তখনই সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করতে চলে যাই। সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে গিয়ে ঘরে অন্য একজনকে পেয়েছি। তবে এর মানে এই নয় যে, সে ঘরটি বিক্রি করেছে। এরপরও আমরা অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’
মঠবাড়িয়া উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপপরিচালক মাহামুদুল হক ইতিমধ্যে অবহিত হয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে জানান, শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও