Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৫

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে। কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে। চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে।’

বিজ্ঞাপন

কৃষি বিজ্ঞানিরা তাদের গবেষণার দ্বারা অনেক ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্ভাবিত জাত দ্রুত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সাশ্রয়ীমূল্যে সার, সেচ ও বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্বের উৎপাদনকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদিত খাদ্যশস্য ছিল ৩২৮.১৬ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৭.৬৮ লাখ মেট্রিক টন।’

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসব তথ্য জানান। প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার (নওগাঁ-২) প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোম সফরসহ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, “জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে ‘United Nations Food Systems + 2 Stocktaking Moment (UNFSS+2)’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দিতে আমি গত ২৩-২৬ জুলাইতারিখে ইতালির রোম সফর করি। সফরের প্রথম দিন ২৪ জুলাই দুপুরে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)-এর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেই। আমার বক্তব্যে আমি খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপ ও কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরি। আমি বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে সফলতা, কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনের ভূমিকা, খাদ্যশস্য সংরক্ষণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতির প্রবর্তন, ‘স্মার্ট কৃষি’ বাস্তবায়নে তরুণ সমাজের ভূমিকা, দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরি।”

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি কোভিড-১৯ অতিমারিতে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার জন্য আমাদের জনগণকে আহ্বান জানানোর বিষয়টি অবহিত করি। আপনারা জানেন, আমি নিজেও আমার সরকারি বাসভবনে অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগাই এবং গণভবনের আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, পেঁয়াজ, রসুন, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করার নির্দেশ দেই। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অপুষ্টি পীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনে ৫ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথমত আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন; দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে ‘Black Sea Grain Deal’কে চালু রাখার পাশাপাশি খাদ্য ও সার রফতানির বিধি-নিষেধগুলো তুলে নেওয়াসহ যেকোন বাণিজ্য বাধা অপসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত দরকার; তৃতীয়ত, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ‘ফুড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার রূপান্তরের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে; চতুর্থত, কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল রেখে ন্যানো-প্রযুক্তি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তিগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়; এবং পঞ্চমত, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অপচয় রোধে তরুণ সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।”

‘আমার এ প্রস্তাবনাগুলো উপস্থিত বিশ্ব নেতা, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড অফ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ)-সহ অন্যান্য সংস্থার নিকট প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল, সামাও এর প্রধানমন্ত্রী ফিয়ামি নাওমি মাতাফা, ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তেনিও তাজানি, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও তেরেস এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন’, বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতোরেস যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটাতে সক্ষম নতুন খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি কৃষি সংক্রান্ত বহুমুখী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জাতিসংঘ ও রাষ্ট্রগুলোকে এ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘কোভিড মহামারি পৃথিবীর বাণিজ্য ও যোগাযোগকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। সে সাথে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। খাদ্যশস্য বণ্টনে যুদ্ধ একটি বড় সমস্যা।‘ আসন্ন G7-এ খাদ্য নিরাপত্তাকে একটি মূল এজেন্ডা করতে ইচ্ছুক বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ ওলন গাজোয়ানি যিনি তার দেশের কৃষিতে বনায়ন পুনরুদ্ধারের এবং বীজ বহুমুখীকরণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় সম্পদের অপ্রতুলতার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘সঙ্কটজনক’ অভিহিত করেন।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে একটি দৃঢ় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকা মহাদেশে কৃষির জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান কৃষি উৎপাদন ইথিওপিয়ার একটি অগ্রাধিকার। তবে সমস্যা হচ্ছে, প্রযুক্তির প্রাপ্যতা এবং বিশ্বব্যাপী বীজের ক্রমবর্ধমান নাম। খাদ্য শুধু ভরণপোষণ নয়, এটি ঘর, আনন্দ, জীবন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমাদের এ স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমান বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সব ক্ষেত্রে যোগানব্যবস্থার সংকটি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায়, এ সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

খাদ্য নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রী রোল মডেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর