অতিরিক্ত শুল্ক ভোক্তার পকেট থেকে কাটছে ২৮০৩০০ কোটি টাকা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৫১
ঢাকা: দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় অতিমাত্রায় শুল্ক নির্ধারণ করায় বছরে ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি খরচ হচ্ছে জিডিপির ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যা প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে প্রায় ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি দামে দেশের ক্রেতাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে দেশে রফতানি বাড়ানো একটি বড় সমস্যা। আবার ট্যারিফ প্রোটেকশনের কারণে রফতানি বহুমুখীকরণে বড়ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ‘ট্যারিফ প্রটেকশন অ্যান্ড এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন আর নট সিমচ্যুয়ালি এক্সক্লুসিভ: দ্য বাংলাদেশ ফেনোম্যানা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও এ বিআইডিএস সন্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিআইডিএসের ড.কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল প্রমুখ।
এ সময় জায়েদী সাত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে গড় আউটপুট ট্যারিফ কিছুটা কমানো হলেও এখনও বাড়তি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই ট্যারিফ ছিল ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশে। এদিকে, গড় ইনপুট ট্যারিফ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এখন আছে ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এসব কারণে আমাদের দেশে রফতানি বাড়ছে না। সেইসঙ্গে বহুমুখীকরণও হচ্ছে না। কেননা উৎপাদকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য রফতানির চেয়ে দেশীয় বাজারে বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহী হচ্ছে। এতে লাভও হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে লাভ কম হওয়া এবং রফতানিতে নানা শর্তপূরণসহ বিভিন্ন জটিলতায় নিরুসাহিত হচ্ছেন উৎপাদকরা।’
তিনি বলেন, ‘এদিকে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এদেশে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। কারণ, সরকার দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সেসব সুবিধা দিচ্ছে সেই সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এদেশে বিনিয়োগ করে অভ্যন্তরীণ বাজারেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছে। এজন্য যেসকল বিদেশি বিনিয়োগকারী পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করবে তাদের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, ভিয়েতনাম, মালেয়শিয়া তাদের বাজাার উন্মুক্ত করেছে। স্থানীয় শিল্পের জন্য শুল্ক সুরক্ষা কমিয়েছে। বাংলাদেশে ৯০ দশকে এক দফায় কমানো হলেও এখন দ্বিতীয় দফা কমানোর সময় এসেছে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। তবে থাইল্যান্ড আমাদের জন্য উদাহরণ নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রফতানি পণ্যের ওপর আউটপুট ট্যারিফ কমিয়ে দেওয়া দরকার। কেননা এখনকার মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া।’
ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘বাংলাদেশে আউটপুট ট্যারিফ গত ১০-১২ বছরে বেড়েছে। এটি কমানো দরকার। পাশাপাশি দেশীয় শিল্প সুরক্ষার বিষয়টিও ভাবতে হবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়ে সিন্ডিকেটের একটা ভূমিকা থাকলেও ট্যারিফ পলিসির ভূমিকাও অনেক। নিত্য পণ্যেও দাম কমাতে ইনপুট ও আউটপুট ট্যারিফ দুটোই কমানো দরকার।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ডিমসহ বিভিন্ন নিত্য পণ্যের ওপর আউটপুট ট্যারিফ কমিয়ে দেওয়া দরকার। তাহলে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ গড় নমিনাল প্রটেকশন ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানি পণ্যের ঝুড়ি বহুমুখীকরণ করতে হবে। তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। সাধারণ ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে না।
তারা আরও বলেন, এছাড়া শুধু পোশাক খাতে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এটা অন্য খাতে দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সব খাতের শিল্পের জন্য সমান সুযোগ থাকা দরকার। কেননা প্রটেকশনের মধ্যেও নানা ভিন্নতা রয়েছে। কোনো শিল্পকে কম আবার কোনো শিল্পকে বেশি সুবিধা দেওয়াটা ভালো দিক নয়।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম