সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ম-আপ, অক্টোবরে ফাইনাল
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৫
ঢাকা: সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। চলতি সেপ্টেম্বরে তারা ওয়ার্ম-আপ শেষ করবে বলে জানা গেছে। আর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে চূড়ান্ত বা ফাইনাল আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। খুব শিগগরিই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচির ‘ধরন’ ঠিক করবে বিএনপির হাইকমান্ড।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দুই সপ্তাহে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক সমাবেশ ও পাঁচটি রোডমার্চ করবে বিএনপি। হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির আগে চলতি মাসে ওয়ার্ম-আপ শেষ করবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সমাবেশ এবং শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তারুণ্যের রোডমার্চ হবে।
দলীয় সূত্র মতে, ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর শহর থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে সৈয়দপুর দিয়ে দশমাইল হয়ে দিনাজপুরে গিয়ে শেষ হবে। পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে সেটি সান্তাহার, নওগাঁ হয়ে রাজশাহী নগরে গিয়ে শেষ হবে। তিন দিন বিরতি দিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর আবার সিলেটে রোডমার্চ। ভৈরব বাজার থেকে এই রোডমার্চ শুরু হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটে গিয়ে শেষ হবে। ২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থেকে রোড মার্চ শুরু হয়ে যশোর, নোয়াপাড়া হয়ে খুলনায় যাবে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের উদ্দেশে রোডমার্চ করবে। এটি কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে শেষ হবে।
এসব রোর্ড মার্চের মূল আয়োজক সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও জেলার ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল। তারুণ্যের এই রোডমার্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিগত দিনের বিএনপির সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, ধানের শীষের প্রার্থী এবং আগামীতে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহী নেতারা এসব রোডমার্চে অংশ নেবেন।
এর আগে, গত জুন ও জুলাইয়ে সারা দেশে ছয়টি বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছিল জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ওইসব সমাবেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল বিএনপির তৃণমূলে। সেই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে এবার এই তিন সংগঠন রোডমার্চের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও রংপুর বিভাগে অনুষ্ঠেয় এ রোডমার্চ মূলত চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে শেষ গণসংযোগ বা জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে তারুণ্যের এ রোডমার্চ তরুণ-যুবসমাজকে জাগিয়ে তোলা এবং সরকার হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার জন্য। তবে এ ক্ষেত্রেও কয়েকটা ব্যাপারে শঙ্কা কাজ করছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, যেহেতু সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে, সেহেতু চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে ‘গণসংযোগমূলক’ এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হতে পারে। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানা মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় আসতে পারে। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে সাজা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদসহ অনেক নেতা-কর্মী কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সূত্র মতে, এ ধরনের নানা শঙ্কা এবং প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার ব্যাপারে স্থিরপ্রতিজ্ঞ বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ‘এসপার-ওসপার’ করতে চায় দলটি। সবধরনের সম্ভাবনা সামনে রেখেই চূড়ান্ত আন্দোলনের মাস হিসেবে অক্টোবরকে বেছে নিয়েছে বিএনপি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল আজকের বিরোধীদল বিএনপি। এ বিষয়টিও মাথায় রাখছে দলটির নেতারা।
জানা গেছে, চূড়ান্ত এ আন্দোলনে সমমনা রাজনৈতিক দলে এবং জোটকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। অক্টোবরেই আন্দোলনের শেষ দেখতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে দলের নেতা-কর্মী এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে সবটুকু শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) মহাসচিব শাহদাত হোসেন সেলিম সারাবংলাকে বলেন, ‘চলতি সেপ্টেম্বরে পদযাত্রা, রোডমার্চ, সমাবেশের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব আমরা। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের সেভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘বড়’ কর্মসূচি বা চূড়ান্ত আন্দোলন বোধ হয় অক্টোবরেই শুরু হবে। সরাসরি কিছু না বললেও আকার-ইঙ্গিতে আমাদের এমনটাই বোঝানো হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারবাংলাকে বলেন, ‘যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটা থামবে না। দিন যত যাবে আমাদের অন্দোলন তত তীব্র হবে। জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আন্দোলনের ধরন, গতি, প্রকৃতি নির্ধারণ হবে।’
‘হ্যাঁ, যেহেতু তারা (নির্বাচন কমিশন বা সরকার) নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথা বলছে, সেহেতু অক্টোবরেই আমরা সরকারকে বাধ্য করব দাবি মেনে নিতে। তত্ত্ববধায়কের দাবি না মানলে তফসিল এবং নির্বাচন, কোনোটাই জনগণ হতে দেবে না’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম