Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এতগুলো ব্যবসায়ী শেষ হয়ে গেল, কারও কোনো চিন্তা নেই’

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৪ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৫

ঢাকা: শুক্রবার ও শনিবার ছুটির এই দুই দিন বেচাকেনা বেশি হয়; তাই তিন দোকানে মাল উঠাইছিলাম। কিন্তু সব শেষ। দোকানে নয় লাখ টাকার মাল ছিল, সব পুড়ে ছাই। আমি পথে বসে গেলাম। ব্যাংকের ঋণ, এনজিওর ঋণ, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। কিভাবে কী করবো? কিছুই বুঝতেছি না। আমার মাথায় কিছুই খেলতেছে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. হাবীবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গেলে দেখা হয় ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। এসময় ‘আমি এখন নিঃস্ব’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

হাবীবুর রহমান বলেন, চাঁদপুর ফ্যাশন হাউজ, ফারিয়া ক্লোথ স্টোর আর হাবীব ফ্যাশন নামে এই মার্কেটে তিনটা দোকান ছিল; একই রাতেই সব শেষ। আল্লাহ ছাড়া কেউ আমার অবস্থা কেউ বলতে পারব না। কেন এমন হলো?

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, আগুন লাগছে ফায়ার সার্ভিস এসে নেভাবে। কিন্তু সেই ফায়ার সার্ভিসের কাছে পানি নেই। আশপাশে কোথাও জলাধারও নেই। পানি পাবে কোথায়? আসলে সবখানে দুর্নীতি গ্রাস করেছে। কোনো ভালো কাজে কারও মন নেই। এতগুলো ব্যবসায়ী শেষ হয়ে গেল। কারও কোনো চিন্তা নেই।

হাবীবুর রহমান বলেন, রাত ৩টার দিকে আগুন লাগছে। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই সংবাদ পাই। তখনও ঘুমাইনি। ঢাকা উদ্যানের বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি না পেয়ে রাস্তায় দৌঁড় শুরু করেছি। পরে একটি অটো পেয়েছি। ওই অটোতে আরও দুই ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে এসে দেখি আমার দোকানে আগুন লাগেনি। তখন ওপরে আগুন জ্বলছিল। দোকানের চাবি ছিল কর্মচারীদের কাছে। তারাও এসেছে। তিন দোকানের একটির শাটার খুলে সামান্য কিছু কাপড় বের করতেই আগুন চলে আসে। এরপর আমরা কেউই দোকান তো দূরের কথা গলিতেও প্রবেশ করতে পারিনি। এরপর দাঁড়িয়ে দেখলাম সব স্বপ্ন পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সব মিলিয়ে কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়ে গেল। এরমধ্যে মহাজান কিছু টাকা পাবে, আত্মীয় স্বজন টাকা পাবে, ব্যাংক পাবে। এরা সহ্য করলেও কিছু এনজিও রয়েছে যারা কোনো কিছুই মানবে না। তারা নাছোড় বান্দা। আপনি যেমনই থাকেন টাকা দিতে হবে যথা সময়ে। এখন সরকার বা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও কোন কিছু আশ্বাস দেয়নি। মার্কেটটা যদি সবার আগে মেরামত করে ঠিক করে দেয় তাহলেই হয়তো কিছুটা পোষানো সম্ভব হবে।

আগুন কোথা থেকে লেগেছে জানতে চাইলে হাবীবুর রহমান বলেন, মার্কেটের অনেকেই বলছে হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কিন্তু আগুন মুদি মার্কেট থেকে লেগেছে। কিভাবে লেগেছে সেটা যেহেতু দেখিনি সুতরাং এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।

তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আমি এটা মানতে পারছি না। কারণ রাত ১০টার মধ্যেই কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০টার পর মার্কেটে কোনো বিদ্যুৎ থাকে না।

প্রায় ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুন। ছবি: সারাবাংলা

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে মার্কেটে আগুন লাগে। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনে মার্কেটের প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে এবং ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। তদন্ত কমিটিতে আর কারা আছে তা পরে জানানো হবে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/ইউজে/এনইউ

অগ্নিকাণ্ড কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর