সরকারকে থোড়াই কেয়ার, বাড়তি দামেই আলু-পেঁয়াজ-ডিম বিক্রি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৪
ঢাকা: হুট করেই বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, কিন্তু সরকার যখন এই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় ঠিক তখনই ব্যবসায়ীরা বাগড়া দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কারওয়ান বাজার ও বসুন্ধরা কাঁচা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আগের দামেই তথা বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি মূল্যে বিক্রি করলে লোকসানের টাকা কে দেবে আমাদের? লোকসানের অজুহাতে, এবারও সরকারকে থোড়াই কেয়ার করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। যেখানে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫-৩৬ টাকা। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা করে। যেখানে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৪-৬৫ টাকা।
অপরদিকে, ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, যা সরকার ঠিক করে দিয়েছে ৪৮ টাকা হালি।
কেন বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম, পেঁয়াজ ও আলু এমন প্রশ্নে কাওরান বাজারের পাইকারি নিত্যপণ্যের সামগ্রী বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেখেন আমরা এখনো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তালিকা পাইনি, তবে শুনেছি। আর বেশি দাম দিয়েই তো আমার এসব কিনেছি, এখন কি আমরা লোকসানে এসব বিক্রি করবো। সরকার কি আমাদের লোকসানের টাকা দেবে?’
বসুন্ধরা কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা হেকিম আলী বলেন, ‘সরকার গতকাল মূল্য নির্ধারণ করেছে। আজ সকালেও বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনেছি, আমাদের অনেক খরচ। পণ্য আনা, মার্কেট খরচ, জনবল খরচ সবকিছু তো বিবেচনা করে বিক্রি করতে হয়। পাইকারি মোকামে পণ্যের দাম বেশি থাকলে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। নয়তো ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামে চলে যেতে হবে। আমরা তো পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি, সে কথা তো কেউ বলে না। কমে কিনতে পারলে, কম দামে বিক্রি করতে তো আমাদের সমস্যা নেই।‘
এদিকে কাওরানবাজারে বাজার আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জিয়াউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল সরকার তিনটি সামগ্রীর দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সেগুলোর দাম কমেনি। আগের বাড়তি দামেই সেসব বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু রাতারাতি যখন ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন তখন কিন্তু আমাদের বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা জিম্মি নাকি সরকারের কথা তারা ভ্রক্ষেপ করছে না ফলে সরকারও জিম্মি? এভাবে কি মানুষ বাঁচতে পারে? রাজধানীতে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বেতন তো বাড়ছে না।’
বসুন্ধরা কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসা রাশেদা খানম বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ের বড় অভাব। যারা সরকারের নির্দেশ মানছে না তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। বিশ্বের আর কোনো দেশে এভাবে সরকারকে জিম্মি হতে হয় না, দেশের মানুষের কষ্ট করতে হয় না। এখন ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এলে ব্যাগ ভরে না। ২-৩টা সামগ্রী কিনলেই ১ হাজার টাকা শেষ! কিভাবে একটা মানুষ এই শহরে চলবে? সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিৎ।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একই বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দেয়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন দাম ৫ টাকা কমে এখন ১৬৯ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। তবে বাজারে এখনও কম দামের তেল সরবরাহ করা হয়নি। ফলে ভোক্তাকে সেই আগের ৫ টাকা বেশি দাম গুণতে হচ্ছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা।
এদিন বাজারে সব প্রজাতির মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। ২০ টাকা বেড়ে সোনালি ৩৪০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মাছের দামও আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে, প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাঙাস ২৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাতলা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পোয়া ৩০০ থেকে ৪৮০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ৩২০ টাকা, কই মাছ ৩৪০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে সবজির দামও। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ১০০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
প্রতি পিস ডিম ১২, আলু ৩৬ ও পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা নির্ধারণ
সারাবাংলা/এসজে/এমও