।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ভারতীয় ঋণে দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২ হাজার ১০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৩৩ কোটি ৩২ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ (এলওসি) থেকে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারি বিল্ডিংস ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হসপিটাল, নোয়াখালী’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টারশিয়ারি লেভেলের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সোমবার (১৪ মে) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য কার্যক্রম বিভাগে পাঠিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) একনেক বৈঠক হলে হয়তো এটি উপস্থাপন হতো। কিন্তু যেহেতু পরবর্তী একনেক হতে এখনো অনেকদিন বাকি আছে, তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনেক উন্নতি করলেও স্বাস্থ্য খাতে এখনো বিশ্বমানের অনেক কিছু করার প্রয়োজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালগুলো যথাক্রমে প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকে। সরকারিভাবে টারশিয়ারি স্বাস্থ্য সেবামূলক কার্যক্রম সাধারণত জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট হতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
টারশিয়ারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দিকটি বিবেচনায় এনে টারশিয়ারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়িত সেক্টর কর্মসূচির আওতায় এ সব মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেডিকেল কলেজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা না করায় একদিকে এসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ উন্নত চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় বিদ্যমান চারটি মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নের জন্য যেসব প্রকল্প নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে এই প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরকারি তহবিল এবং এলওসি’র আর্থিক সহায়তায় চারটি মেডিকেল কলেজের জন্য ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন ও হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও যানবাহন করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, প্রতিটি মেডিকেল কলেজে পাঁচ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ; ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ; ইন্টার্ন ডক্টরস ডরমিটরি নির্মাণ; চিকিৎসক-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন নির্মাণ; বিভিন্ন মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের জন্য আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি সংগ্রহ।
সারাবাংলা/জেজে/এমআইএস/টিআর