ডেটলাইন অক্টোবর: সরকার ও ইসির আচরণ দেখে কর্মসূচি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৬
ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অক্টোবরেই ‘ফাইনাল’ আন্দোলনের কথা জানিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় রয়েছে— এ মাসেই হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। তবে এরকম ‘কঠোর’ কর্মসূচি দেওয়ার ইচ্ছা আপাতত বিএনপির নেই। দলটি বলছে, মাঠের চাহিদা, সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা, সরকারের আচরণ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ দেখে কর্মসূচির ‘ধরন’ নির্ধারণ করবে।
অক্টোবরে আন্দোলন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কাও। নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলে ‘সহিংসতা’ বাড়তে পারে— এমন আশঙ্কা রয়েছে সরবার মধ্যেই।
এমন বাস্তবতায় আন্দোলন জোরদার করা নিয়ে শঙ্কা আছে বিএনপির। দলটির নেতারা বলেছেন, সরকারের শেষ সময়ে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা কেমন থাকে, সে বিষয়টি আন্দোলন কর্মসূচি নির্ধারণে বিবেচনায় আনা হবে। পুলিশ ও প্রশাসন পুরো মাত্রায় সরকারকে সহায়তা না করলে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানো হবে।
এদিকে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে আন্দোলন নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকার বাইরে। ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর-সৈয়দপুর-দিনাজপুর এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া-নওগাঁ-রাজশাহীতে তারুণ্যের রোড মার্চ করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ করেছে দলটি।
এরপর পর্যায়ক্রমে ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে রোড মার্চ; ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ; ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে রোড মার্চ; ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ; ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোড মার্চ ও ঢাকায় পেশাজীবী কনভেশন; ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনসমাবেশ; ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ; ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন; ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোড মার্চ; ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ; এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মিরসরাই ও চট্টগ্রামে রোড মার্চ করবে বিএনপি।
দলীয় সূত্র বলছে, এসব কর্মসূচিতে সরকারের আচরণ দেখে অক্টোবর মাসের কর্মসূচির ধরন নির্ধারণ করবে বিএনপি। যতদূর জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মতো অক্টোবরেও সমাবেশ, রোড মার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, গণসংযোগ চালিয়ে যাবে বিএনপি। হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ইচ্ছা তাদের নেই। রেল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধ, নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয় ঘেরাও করার পরিকল্পনাও করছে না তারা।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মানুষের সমর্থন আছে। সেটি নিয়ে জোরদার আন্দোলন হতে পারে। তবে আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে এবং জানমালের ক্ষতি হলে সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবে বিএনপি। সুতরাং জনআকাঙক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচির ধরন ঠিক করতে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই সহিংসতা চাই না। আমরা চাই সরকার ভালোয় ভালোয় আমাদের দাবি মেনে নিক। দ্রুত পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তাদের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার সুযোগ তৈরি করুক। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার ও পার্লামেন্ট গঠন করুক।’
‘আমাদের এই দাবি না মানলে অবশ্যই আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নেব। সেই আন্দোলনের ধরন কেমন হবে, তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ, নির্বাচন কমিশনের নেওয়া উদ্যোগ, জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং এখন যারা মাঠের আন্দোলনে আছে, তাদের চাহিদার ওপর,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবরে কী ধরনের কর্মসূচি আসবে, সেটা এখনই বলা যাবে না। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই আমরা আন্দোলনে বিরতি দেবো না। ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হলে জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচির ধরন নির্ধারণ করা হবে। আপাতত এটাই আমাদের বক্তব্য।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
অবরোধ অহিংস আন্দোলন আন্দোলন কঠোর আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি সহিংস আন্দোলন হরতাল