Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মায়ের ঠিকানা আশ্রয়কেন্দ্র, জমজ শিশুর ঠাঁই ছোটমনি নিবাসে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:১৬

যশোর থেকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে মাহিনুর ও তার জমজ দুই সন্তানকে। ছবি: সারাবাংলা

যশোর: যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে জমজ নবজাতক জন্ম দিয়েছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এক প্রসূতি। ওই প্রসূতিকে কোথায় রাখা হবে, তার জমজ নবজাতকদেরই বা কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই প্রসূতিকে পাঠানো হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে। অন্যদিকে দুই জমজ শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশাকে পাঠানো হয়েছে খুলনার ছোটমনি নিবাসে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে আলাদা দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের সরকারি দুই আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। প্রসূতি মোছা. মাহিনুরের সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকতা মুনা আফরিণ। আর দুই নবজাতকের সঙ্গে ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা খালেদা আক্তার।

এদিন সকালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে মা মোছা. মাহিনুর এবং দুই শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশাকে বিদায় জানান যশোর-৪আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা অফিসার রুবেল হাওলাদার। পরে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারও তাদেরকে বিদায় জানান।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তার দুই সন্তানকে পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা ও দুই সন্তানকে দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে।

যশোর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ বলেন, মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে আসার পর আমরা সব ধরণের চিকিৎসা দিয়েছি এবং দেখাশোনা করেছি।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকতা মুনা আফরিণ বলেন, জমজ সন্তান প্রসব করার পর মাহিনুরকে ৩ সেপ্টেম্বর যশোর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা কার্যালয়, আনসার সদস্য ও এনজিও কর্মীদের সঙ্গে এই ১৮ দিন তাদের দেখভাল করেছি। এখন শিশু দুটিকে খুলনার ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হচ্ছে। মাহিনুরকে গিয়ে গাজীপুরের পথে রওনা হচ্ছি। তাকে কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে হস্তান্তর করে আমি ফিরে আসব।

বিজ্ঞাপন

গত ৩ সেপ্টেম্বর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের খড়ের ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী জমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল তাকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাই মিলে ওই নারী ও তার সন্তানদের দেখভাল করেছে। পরে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১-এর বিচারক বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন। পরে গত সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় মা ও সন্তানদের দুই আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন মাহিনুর হাসপাতালে থাকাকালীন তার সন্তানদের আপন করে নেননি। পরে তার স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলে তারাও প্রসূতি ও দুই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাননি। তাই তাদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

খুলনা ছোটমনি নিবাস জমজ সন্তান মানসিক ভারসাম্যহীন নারী যশোর যশোর সদর হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর