Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ভোটযুদ্ধে নৌকার জয় প্রত্যাশা আ.লীগের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৪

ঢাকা: দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকার জয়যাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। পাশাপাশি নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারায় থাকার বার্তাও দিয়েছেন তারা। আগামী নির্বাচনে জনগণ ফের নৌকার পক্ষে রায় দেবে বলে আশাবাদ করে নেতারা বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রে পথ হারাবে না বাংলাদেশ। অতীতের মতো আগামী দিনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় যাত্রার বৈতরণী আমরা পার হব।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা। বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-চক্রান্ত ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেব বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী বক্তৃতা করেন।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে বক্তব্য দেন- যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শীলা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান প্রমুখ।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এটি যারা বিশ্বাস করে না, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয় নাই, যারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, যারা অস্ত্র দিয়েছিল, কামান দিয়েছিল, ট্যাংক দিয়েছিল পাক বাহিনীকে ওই ধর্মান্ধ জামায়াত রাজাকারদের; তাদের মোকাবিলা করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমরা পরাজিত হই নাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আজও বলতে চাই, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ কিছু নেতা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আপনারা নানানরকম কৌশল করছেন। একাত্তরেও আমরা পরাজিত হই নাই। ওই নৌবহরের হুমকিতে আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে সামনে নিতে চাই এবং দেশে শান্তি দিতে চাই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে চাই। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে আমরা অতীতেও ব্যর্থ হই নাই, আগামী দিনেও ব্যর্থ হব না।’

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। ১৫ বছর ধরে বিএনপির হুমকি-ধামকি আর আন্দোলন দেখছি। তারা খালি বলেন, শেখ হাসিনাকে হঠাবেন। আর আছে মাত্র তিন মাস। তিন মাস আমরা রাজপথে পাহারা দেব। যদি কোনো সন্ত্রাস করেন, আগুন সন্ত্রাস করেন, মানুষ পোড়ান, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেন, আর যদি ব্যালট বাক্স পোড়ান- তাহলে রাজপথে মোকাবিলা করে তার ব্যবস্থা করে দিমু।’ এ সময় নেতাকর্মীদের রাজপথে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে আমাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এই জনমানুষের দল কখনো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় থাকেনি, ক্ষমতায় যায়নি। ১৯৯৬ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে তার ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা ছেড়ে জনতার কাতারে চলে এসেছিলেন। এক ঘণ্টা বেশি ক্ষমতায় থাকেন নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচনই হলো একমাত্র জনসমর্থনের ভিত্তি। সেই জনসমর্থন নিয়েই এই গণমানুষের দল ক্ষমতায় আছে, কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়। কাজেই রক্ষচক্ষু আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই। যতই ষড়যন্ত্র করেন নির্বাচন বানচালের জন্য, সেই নির্বাচনি বৈতরণী আমরা পার হবোই হবো।’

বিএনপির উদ্দেশে আব্দুর রহমান বলেন, ‘ক্ষমতায় যেতে চাও, অথচ নির্বাচন করবে না। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। আজ দেশের যে দলটি আমাদের চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাতে চায়, ওরা জানে না- সে দলের নাম আওয়ামী লীগ। সেই দলের নেতা হলেন শেখ হাসিনা।’

বিএনপির সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘মার্কিন কোর্ট তাদের সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে। কোনো বিদেশি শক্তি এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী সঠিক সময়ে হবে। নির্বাচনের বিরোধিতা করলে রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলা করা হবে।’

আওয়ামী লীগ যখনি নির্বাচনে এসছে স্রোতের বিপরীতেই নৌকা বাইয়ে এগিয়ে গিয়েছে জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘বাপের বেটী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি খরচ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে তারা স্যাংশন দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। শেখ হাসিনা এগুলো পরোয়া করে না।’

সমাবেশে বক্তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজ একটাই কথা, দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দেশকে আমরা শান্তির পথে নিতে চাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দেশকে আমরা অগ্রগতি প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তার জন্য বাররার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আগামী দিনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনে আমরা এই স্লোগানকে আবারও বাস্তবায়িত করব।’

সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজির হতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে সমাবেশ শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটে। বারবার ব্যানার নামানোর অনুরোধ উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীদের অনেকে ব্যানার উঁচিয়ে ধরে থাকেন। তাই নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেন মহানগর থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ উপেক্ষা ভোটযুদ্ধ রক্তচক্ষু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর