সড়ক দুর্ঘটনা: চট্টগ্রামে মোটরসাইকেলেই ৩০% মৃত্যু
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার চালকরা।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কনফারেন্স হলে সিএমপি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম নগরী সড়ক নিরাপত্তা’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নগরীতে পুলিশের রেকর্ডের ভিত্তিতে এটিই প্রথম প্রকাশিত সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) প্রোগ্রামের আওতায় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় সিএমপি ও চসিক প্রতিবেদনটি তৈরি এবং প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নগরীতে এক লাখ মানুষের মধ্যে রোড দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩৮ শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ২ দশমিক ১ থেকে ২০২২ সালে ২ দশমিক ৯ জনে পৌঁছেছে। নিরাপদে হাঁটার মতো সড়ক পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কারণে শহরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে, যার প্রমাণ হলো মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশই পথচারী। এর বাইরে রোড ক্র্যাশে মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার চালকরা।
বন্দরনগরী হওয়ায় চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে প্রচুর সংখ্যক ভারী ট্রাক চলাচল করে এবং এসব যানবাহন অধিকাংশ পথচারী ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাকলিয়া থানা । সাধারণত ধর্মীয় উৎসব, ঈদ-উল-ফিতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ছুটির সময় বেশিরভাগ প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেখা গেছে। ২০২০-২২ সময়কালে রোড ক্র্যাশে মৃত্যুর ৮১ শতাংশই ছিলেন পুরুষ এবং তাদের অধিকাংশই ছিলেন ২০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী। অন্যদিকে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেশি।
যদিও সব বয়সী পথচারীদের মৃত্যুর হার কাছাকাছি ছিল, তবে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি বলে দেখা গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী চালকরা বেশিরভাগ ক্র্যাশের জন্য দায়ী ছিলেন। নগরীর সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রতিবেদনটিতে শহরের ১০টি করে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শহরের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, যেখানে বিগত তিন বছরে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় পাঁচটি করে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে টাইগারপাস মোড় এবং আউটার রিং রোডের খেজুর তলা, তিন বছরে সেখানকার ২৫০ মিটারের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছে।
নগরীর সড়কগুলোকে নিরাপদ করতে রোড ক্র্যাশের তথ্য পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করা যায় এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাথ প্রশস্ত করা, উঁচু ক্রসওয়াক নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাথ নিশ্চিত করা, গতিরোধক স্থাপন ইত্যাদি।
এছাড়া মোটরচালিত গাড়ির পরিবর্তে বাইসাইকেলের ব্যবহার উৎসাহিত করার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং বেপরোয়া ড্রাইভিং নিয়ন্ত্রণ করতে শহরে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিএমপির পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু শুধু মানুষের বা পরিবারের ক্ষতি নয়। এটা সমাজের ও দেশের ক্ষতি। এই প্রতিবেদন আমাদের সবাইকে ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে। অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু পুলিশকে দায়ী করেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। এই প্রতিবেদন সবাইকে নাড়া দেবে।’
‘বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যায়। কেউ রোগে, কেউ খুনের স্বীকারসহ আরও বিভিন্ন ভাবে। এর মধ্যে রোড ক্র্যাশে মানুষ মারা যাওয়ার পরিসংখ্যানে আমরা অষ্টম স্থানে। গত বছরে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫৩৯ জন আর খুনের শিকার হয়েছে ২৯৬ জন। সারা বিশ্বে ১৩ লাখ মানুষ রোড ক্র্যাশে মারা যায়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কেন, কী কারণে ও কাদের দোষে এ সব রোড ক্র্যাশ হচ্ছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সিএমপির পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইজিআরএসের কো-অর্ডিনেটর আবদুল ওয়াদুদ, সার্ভিল্যান্স কো-অর্ডিনেটর কাজী সাইফুন নেওয়াজ, রোড ইনজুরি সার্ভিলেন্সের সিনিয়র টেকনিক্যাল পরামর্শক মিরিক পালা, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
সারাবাংলা/আইসি/একে