১০ বছরের কমবয়সী ৮০ জনের মৃত্যু, শিশুদের ডেঙ্গু ঝুঁকি বাড়ছেই
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৮
ঢাকা: দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য শিশুদের সংখ্যা। শুধু আক্রান্তই নয়, সারাদেশেই শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এবার উল্লেখ করার মতো বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে সর্বমোট ৯০৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। এর মাঝে ৮০ জনের বয়স ১০ বছরের কম। মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মাঝে ৮.৮০ শতাংশই শিশু, যাদের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মাঝে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর লক্ষণ পরিবর্তনের পাশাপাশি এবার একাধিকবার ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এছাড়া দেরিতে চিকিৎসা শুরুর ফলেও শিশুদের মাঝে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এমন অবস্থায় জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুদের ডেঙ্গু পরীক্ষা ও তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের-পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে এক লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে অনুর্ধ্ব ১০ অর্থাৎ ১০ বছরের কম বয়সী ২১ হাজার ১৩১ জন শিশু বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ আক্রান্তদের মাঝে ১১ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ০ থেকে ৫ বছর বয়সসীমার ১০ হাজার ৫৩৬ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে পাঁচ হাজার ৯৪০ জন ছেলেশিশু ও চার হাজার ৫৯৬ জন কন্যা শিশু। এদের মাঝে মারা গেছে ৩৪ জন শিশু। ছেলে শিশুদের মাঝে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মারা গেছে বেশি কন্যা শিশু। ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২১ জন কন্যা শিশু ও ১৩ জন ছেলে শিশু মারা গেছে যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম।
অন্যদিকে, দেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ছয় থেকে ১০ বছর বয়সসীমার ১০ হাজার ৫৯৫ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে ছয় হাজার ৪৪ জন ছেলেশিশু ও চার হাজার ৫৫১ জন কন্যা শিশু। এদের মাঝে মারা গেছে ৪৬ জন শিশু। ছেলে শিশুদের মাঝে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মারা গেছে বেশি কন্যা শিশু। ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৮ জন কন্যা শিশু ও ১৮ জন ছেলে শিশু মারা গেছে যাদের বয়স পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর বয়সসীমার মাঝে।
দেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছে ৩১ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সসীমায়। এই বয়সসীমার ৮৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে যা মোট মৃত্যুর ৯ শতাংশ। এই বয়সসীমায় যারা মারা গেছে তাদের মাঝে ৫৯ জন তরুণী ও ২৪ জন তরুণ।
৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সসীমায় ৫৫ জন নারী ও ২৭ জন পুরুষ অর্থাৎ মোট ৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে চলতি মৌসুমে।
এখন পর্যন্ত দেশে ৯০৯ জন মারা গেছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। এর মাঝে ৫২০ জন নারী ও ৩৮৯ জন পুরুষ রোগী এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার যে শিশুদের অবস্থা খুব দ্রুত অবনতি হচ্ছে তাদের মাঝে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা সঠিক সময়ে লক্ষণ বুঝতে না পারার কারণেও শিশুদের বিপদ বাড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে হঠাৎ রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে, আইসিইউতে নিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না।‘
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু লক্ষণ বদলানোর কারণেও এবার অভিভাবকদের দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে। আগে দেখা যেতো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকতো। এরপরে কমে এলেও দেখা যেতো আবার বেড়ে হঠাৎ শকে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। কিন্তু এবার এক থেকে দুই দিনের রোগীও খুব দ্রুত শকে চলে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদের খিচুনি হচ্ছে বা শিশুদের নিউরোর কোনো সমস্যা বা ব্রেন অ্যাটাক হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে আনার আগেই শিশুদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সতর্কতা হিসেবে হলেও জ্বর এলেই শিশুর ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা বুঝতে হবে অভিভাবকদের। যদি জ্বরের পাশাপাশি বমি, পেট ব্যাথা, কাঁশি ও অন্যান্য লক্ষণ থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে বাচ্চারা কিন্তু বড়দের মতো নিজেদের লক্ষণ বলতে পারবে না। আর তাই তাদের খেলাধুলার মাত্রা কমছে কিনা এবং প্রস্রাবের মাত্রা কমছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা জরুরি।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও