Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুতে আগস্টকে ছাড়িয়ে গেল সেপ্টেম্বর, মৃত্যু ছাড়াচ্ছে হাজার

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৫১

ঢাকা: আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সারা দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত যত জন মারা গেছেন, চলতি বছরেই মারা গেছেন তার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে গত আগস্ট মাস ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ দিন আগস্টের সেই পরিসংখ্যানকেও পেছনে ফেলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। সেপ্টেম্বরের ২৭ দিনেই সেই সংখ্যা ৭৩ হাজার ২৩ জন। অর্থাৎ এই ২৭ দিনেই আগস্টের ৩১ দিনের তুলনায় এক হাজার ৪৭ জন বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যায় অবশ্য আগস্টকে আরও আগেই পেরিয়ে গেছে সেপ্টেম্বর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, আগস্টে ডেঙ্গু মৃত্যু হয়েছিল ৩৪২ জনের। সেখানে সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ২৭ দিনে ডেঙ্গুতে প্রাণহানি হয়েছে ৩৬৫ জনের।

এদিকে ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট মৃত্যু হয়েছিল ৮৫৩ জনের। অন্যদিকে কেবল ২০২৩ সালেই এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৯৫৮ জন। প্রতিদিন যে পরিমাণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটছে, তাতে সেপ্টেম্বর মাসই হয়তো এ বছরে ডেঙ্গুতে এক হাজার রোগীর মৃত্যুর সাক্ষী হবে।

আরও পড়ুন- টানা বৃষ্টিতে ফের এডিসের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা, গা করছে না ২ সিটি

আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি ছিল ঢাকা শহরে। তবে এ বছর ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সেপ্টেম্বরের যে ৭৩ হাজার ২৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ হাজার ১৯৫ জন। বাকি ৪৯ হাজার ৮২৮ জনই ঢাকার বাইরের।

বিজ্ঞাপন

আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকার বাইরে বেশি হলেও অবশ্য ডেঙ্গুতে মৃত্যু এখনো ঢাকাতেই বেশি। সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত যে ৩৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৯ জন।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যুর পরিসংখ্যানে নারীদের সংখ্যাও বেশি পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বরে যে ৩৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৯৯ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো বাকি ১৬৬ জন পুরুষ।

ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির পেছনে মশা নিধনে সমন্বিত উদ্যোগ না থাকাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। শরতের এই সময়ে এসেও নিয়মিত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে তাদের।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এবার ডেঙ্গু রোগীর যে সংখ্যা, সেটি ভীষণ উদ্বেগজনক। মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে মাইকিং, জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা, ওষুধ ছিটানো— সবকিছু একসঙ্গে করা দরকার ছিল। সেটি করতে না পারার কারণেই এই পরিস্থিতি। সতর্ক না হলে সামনেও পরিস্থিতি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের জন্য সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত অভিযান দরকার ছিল। সেই পরিকল্পনাই করা হয়নি। তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকবে কীভাবে?

ড. কবিরুল বাশার বলছেন, এ পরিস্থিতিতে করণীয় একটিই— যেকোনো মূল্যে এডিস মশা নিধন করা, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। যার যার জায়গা থেকে যদি নিশ্চিত করা যায় যে কোথাও পানি জমে থাকবে না, তাহলেই কেবল এডিস মশার বংশবিস্তার কমে যাবে। তা না হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার বিষয়টি জরুরি। এ ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ডেঙ্গু ডেঙ্গু রোগী ডেঙ্গু সংক্রমণ ডেঙ্গুতে মৃত্যু

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর