Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে প্রক্রিয়ায় বিদেশে যেতে পারেন খালেদা, পাসপোর্ট ডিআইপিতে

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪৪

ঢাকা: পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘সাময়িক’ মুক্তি পেয়েছিলেন, সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছে তার দল ও পরিবার। এ ক্ষেত্রে আইন আদালত নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— এমনটিই বিশ্বাস তাদের।

খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এমন মতামতের সঙ্গেও একমত হতে পারছে না বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পরিবার। বরং এই মতকে তারা বা ভ্রান্ত মতামত হিসেবে দেখছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪০১ ধারায় সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে শর্তহীন কিংবা শর্তযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

আরও পড়ুন- ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়’

এ প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত যদি বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞাও দেয়, তারপরও সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ও ৪০১(৪ক) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’

এই কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারায় বলা হয়েছে— কোনো ব্যক্তি অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয়, সেই শর্তে যে দণ্ডে সে দণ্ডিত হয়েছে সেই দণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবে।

এই বিধির (৪ক) ধারায় বলা হয়েছে— এই বিধি বা অন্য কোনো আইনের কোনো ধারা অনুযায়ী কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো আদেশ দিলে তা যদি কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা তার বা তার সম্পত্তির ওপর দায় আরোপ করে, তাহলে উপযুক্ত উপধারাগুলোর বিধান এই আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

আরও পড়ুন- খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর আবেদন স্বরাষ্ট্র হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে

আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৪০১ (৪ক) ধারা পড়লে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, যেকোনো আইনে যদি কোনো আদালত কোনো ব্যক্তির (সাজাপ্রাপ্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত নয়) চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আদেশ দেন, সেক্ষেত্রেও সরকার তা স্থগিত করে তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। এটি সরকারের সহজাত ক্ষমতা, যাকে বলা হয় Inherent Power। দুদক আইন, ২০০৪-এ সরকারের এই ব্যাপক সহজাত ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়নি। ফলে দুদকেরও এখানে বলার কিছু নেই।’

অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ‘সাময়িক’ মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়া এ ধারার আওতায়-ই বিদেশ যেতে পারবেন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য— বিএনপিপন্থি এই আইনজীবীর মতো বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পরিবারও এমনটিই মনে করছে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ খুব শিগগিরই নেবে খালেদা জিয়ার পরিবার।

সোমবার (১ অক্টোবর) অবশ্য ভিন্ন কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন পাওয়ার পর সে বিষয়ে আইনি মতামত জানতে পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়কে। বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আইনমন্ত্রী বলেছেন, ৪০১ ধারায় কোনো আবেদন নিষ্পত্তি করা হলে সেই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না।

আরও পড়ুন- খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর আবেদন স্বরাষ্ট্র হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে তাকে আদালতে যেতে হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটি বলেছেন সেটি এরকম— যে আদেশ (শর্তসাপেক্ষ সাজা স্থগিত) এখন রয়েছে, সেই আদেশটি যদি বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যালে’র ভিত্তিতেই প্রসিডিউর অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার। সেটি যথারীতি নাকচ হয়েছে। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবেন, যেমনটি এর আগে হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার সারাবংলাকে বলেন, ‘উনারা (খালেদা জিয়ার ভাই-বোন) আমার সঙ্গে এখনো কিছু শেয়ার করেননি।’

আরও পড়ুন- প্রশাসনিক আদেশে খালেদাকে বিদেশ নেয়া যায়: ভয়েস অব আমেরিকাকে ফখরুল

পাসপোর্ট এখনও ডিআইপিতে

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হলে প্রয়োজন পাসপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা। কিন্তু ২০১৯ সালেই খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ সালের মে মাসে পাসপোর্ট তৈরি করতে দেন খালেদা জিয়া। ওই সময় গুরুতর অসুস্থ থাকায় পাসপোর্ট অফিসে সশরীরে হাজির হওয়া তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটি সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিল অসম্ভব।

তখন ই-পাসপোর্টের ঝামেলা এড়িয়ে খালেদা জিয়ার জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় খুব দ্রুততার সঙ্গেই সম্পন্ন হয় খালেদা জিয়ার এমআরপি তৈরির কাজ। কিন্তু ২৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পাসপোর্ট হাতে পাননি খালেদা জিয়া। ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ পাসপোর্ট এখনো পড়ে আছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে (ডিআইপি)।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে না থাকায় ম্যাডামের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) তৈরি করতে দিয়েছিলাম। ওটা ২০২১ সালেই তৈরি হয়ে গেছে। তবে এখনো হাতে পাইনি। ওই সময় কয়েকবার যোগাযোগ করেছিলাম, এই দিচ্ছে, এই দেব বলে আর দেয়নি।’

‘পাসপোর্ট কোনো ইস্যু না। সরকারের সদিচ্ছাটাই এখানে আসল। কিন্তু সরকার তো অনুমতিই দিচ্ছে না। বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলে ডিআপি থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার মাত্র। পাসপোর্ট পাওয়া মাত্র ভিসার জন্য আবেদন করতে পারব,’— বলেন এ বি এম আব্দুস সাত্তার।

খালেদা জিয়াকে কতটুকু প্রয়োজন বিএনপির?

দলীয় সূত্র মতে, নেতৃত্ব গ্রহণের ঠিক ৩৭ বছর (১০ মে ১৯৮৪ থেকে ১০ মে ২০২১) পর এসে এই মহূর্তে দলের জন্য খালেদা জিয়া কতটা প্রাসঙ্গিক— তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। তার অনুপস্থিতিতে লন্ডন থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০১৮ সালের ৮ ফ্রেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর কার্যত তারেক রহমানের নেতৃত্বেই চলছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত কোনো ফাটল বা নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়নি।

তাছাড়া খালেদা জিয়ার এখন যে বয়স এবং শারীরিক অবস্থা, তাতে তিনি সেরে উঠলেও পল্টন কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সভা-সমাবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব না। সারাদেশ সফর করে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা বা সংগঠন গোছানোর চিন্তা তার জন্য সুদূর পরাহত। সুতরাং ব্যক্তি স্বার্থে তাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করার পক্ষে দলের কোনো কোনো নেতা মত দিলেও বিএনপির কর্মী সমর্থকেরা চান, যেভাবেই হোক খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা যেন নিশ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে পারিবারিক উদ্যোগে যে প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন, সেই প্রক্রিয়ায় বিদেশ পাঠানোর কোনো সুযোগ থাকলে সেটি গ্রহণের ব্যাপারে আপত্তি নেই বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

খালেদা জিয়া চিকিৎসা ডিআইপি পাসপোর্ট বিএনপি বিদেশ বিদেশে চিকিৎসা বিদেশে যাওয়ার অনুমতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর