‘ভিসানীতি দেশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল’
৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি দেশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। শুধু তাই নয়, মার্কিন সরকারের এরকম সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমকেও অবমাননা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট আয়োজিত ভিসানীতির নামে ‘সংবাদ মাধ্যমে মার্কিন চাপের’ প্রতিবাদে এক সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক ও টিভি টুডের সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। সভাপতিত্ব করেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ওবায়দুল হক খান।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এর প্রতিবাদ জানাবেন রাজনীতিবিদরা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যখন বললেন, গণমাধ্যমও ভিসানীতির আওতায় আসবে। এ জন্যই আমরা মাঠে নেমেছি। পিটার হাসের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয় দেশে স্বাধীন যে গণমাধ্যম আছে এটি তার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ। এই হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা বন্ধুর আচরণের বিপরীতে প্রভুর আচরণ করতে চায়। আমরা সেটি মানব না। তারা ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে অযাচিত হুমকি দেবেন তা মেনে নিতে পারি না। বাঙালি জাতিকে ভিসানীতি বা স্যাংশনের ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। ভয় ও লোভের কাছে মাথা নত করে মৃত্যু, কাঙিক্ষত বীরের কাজ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতা দেখিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াব। নিজের শক্তি দিয়ে গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারও চাপে কিছু করতে চাই না। রাজনীতির মাঠে যারা আছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
তিনি বলেন, ‘কারও চোখ রাঙানোর কাছে আমরা মাথানত করব না, সে দেশি-বিদেশি শক্তি যে-ই হোক না কেন? স্বাধীনতার পরাভূত শক্তি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে দেশকে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন শক্তির পক্ষে থাকব? তবে কোনো অশুভ শক্তির কাছে গণমাধ্যম মাথা নত করবে না।’
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘ভিসানীতি নিয়ে আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন নই। আমেরিকা বছরে ভিসা দেয় মাত্র ২৭ হাজার। এতে সারাদেশে মানুষের কী সমস্যা? ভিসানীতি তো তাদের আছেই, প্রতিবছর ১ লাখ আবেদন করে। আর ভিসা পায় মাত্র ২৭ হাজার।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা একটি মুক্ত গণমাধ্যম দেশ। আগে যখন ভিসা নীতি দিয়েছিল, আমলা, রাজনৈতিক নেতা, বিচার বিভাগসহ যারা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দেবে। কিন্তু পরে গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতির কথা বলে। আমেরিকা তাদের নীতির বাইরে যাবে না। আমেরিকার নীতি প্রণয়ন করে যাদের চোখে দেখা যায় না। গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতির কথা বলা, এটির লক্ষ্য হলো স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ভিসাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘পিটার হাস আপনি অতিথি মানুষ। তাই আপনার নীতির মধ্যে থাকুন। বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যম কখনও কোথাও আত্মসমর্পণ করে না। করবে না। পৃথিবীতে সাংবাদিকদের অবস্থা খুবই করুণ। মুক্ত গণমাধ্যমের দেশ আমেরিকা। সেই দেশ যখন সাংবাদিকদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের কথা বলে তখন বুঝতে হবে এর পেছনে অনেক কারণ আছে। সেই কারণ খুঁজে বের করা দরকার।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কথা উঠলেই ১৯৭১ সালের কথা মনে পড়ে। রাজাকারের বন্ধু আমেরিকা, এখন ভিসানীতি দিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। বাঙালি জাতিকে ভয় দেখানো সহজ নয়। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে